জাতীয়

কোনো কর্মসংস্থানে নেই কিশোরগঞ্জের ৫৩ শতাংশ নারী

হাওর অধ্যুষিত জেলা কিশোরগঞ্জে অর্ধেকের বেশি নারী কোনো কর্মসংস্থানে নেই। জেলায় মাত্র ১৭ শতাংশ নারী বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত। অর্ধেকের বেশি কর্মসংস্থানে প্রবেশের কোনো চেষ্টাই করেন না।

Advertisement

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) কিশোরগঞ্জ জেলার শ্রমবাজার বিশ্লেষণ-২০২৪ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংলাপে গবেষণায় পাওয়া ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি, সেভ দ্যা চিলড্রেন, ইউসেপ বাংলাদেশ ও দ্যা আর্থ সোসাইটি।

সিপিডির সদস্য ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী এ এস এম শামীম আলম।

Advertisement

কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলার ১০৮ ইউনিয়নে ১ হাজার ৭২৮ জন তরুণী ও নারীর মতামতের ভিত্তিতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। বিভিন্ন জেলার প্রশিক্ষক, শিক্ষক, চাকরিদাতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এতে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলাটিতে ৪৬ শতাংশ তরুণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ে। কিশোরীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ ও তরণীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ শিক্ষায় সম্পৃক্ত আছে। ৩৪ শতাংশ তরুণী চাকরি খুজঁছে, যারা চাকরিতে আছেন তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

গবেষণা প্রসঙ্গে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কিশোরগঞ্জ একটি হাওর অধ্যুষিত জেলা। এ ধরনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের চাকরির বাজারে প্রবেশ করা কঠিন। চাকরির বাজারে জেলাটির মাত্র ৩৪ শতাংশ নারী প্রবেশ করতে চায়। জেলাটিতে মাত্র ১৭ শতাংশ নারী কাজে রয়েছেন। কোন ধরনের কাজে নেই এ ধরনের তরুণীর সংখ্যা ৫৩ শতাংশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তিত শ্রমবাজারে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নারী ও কিশোরীরা। তারা অনেকে চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন না। জেলাটিতে তরুণীদের জন্য ডিজিটাল লিটারেসি ও বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাত, ফ্রিল্যান্সিং ও অন্যান্য খাতে তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে তাকে ভালো কাজের জন্য তৈরি করা। ভালো কাজের জন্য শ্রমিককে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জেলা পর্যায়ে একটা কর্মসংস্থানের মডেল হতে পারে। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা কেন্দ্র করে কোন জেলায় শিল্প স্থাপন ও প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, এটা একটি মডেল হতে পারে যোগ করেন তিনি।

Advertisement

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ বলেন, সরকার খাতভিত্তিক কিংবা জেলাভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। বিভিন্ন জেলায় ঐতিহ্যবাহী শিল্প রক্ষায় আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করছি। শুধু ডিগ্রি অর্জন নয় দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য।

সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা শিশু/দারিদ্র্যবিষয়ক পরিচালক তানিয়া শারমিন বলেন, সরকারি,বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয় না থাকার কারণে দেখা যায় প্রশিক্ষণের পর তরুণী ও নারীরা ঋণ পায় না। কর্মসংসস্থান তৈরিতে জেলাভিত্তিক শিল্প মডেল নয়। শুধু নারীর দক্ষতা উন্নয়নই নয় সামাজিক খাতেও পরিবর্তন আনতে হবে।

এসএম/এসএনআর/এমএস