পতনের ধারা কেটে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
Advertisement
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললো।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই সূচকের পতন হয়। সেইসঙ্গে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। এতে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়ায় শেয়ারবাজার পতন থেকে বেরিয়ে আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এখন বছরের শেষ সময়। এখন শেয়ার বিক্রির চাপ কম। আবার আগামী বছরের শেষের দিকে সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন। নতুন করে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিরতা শুরু না হলে শেয়ারবাজার পতন থেকে বেরি আসতে পারে।
Advertisement
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১১০টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২২৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৪৬ কোটি ৬ লাখ টাকা।
Advertisement
শেয়ারবাজারের এ চিত্র সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। নানা ইস্যুতে টানা পতনে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। তবে বছর শেষদিকে আসায় এবং প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়ায় বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বাজার এখন যে অবস্থায় রয়েছে, এখন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাই বেশি।
এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ২২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ২২ কোটি ১৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- একমি ল্যাবরেটরিজ, জিপিএইচ ইস্পাত, সায়হাম কটন, বেক্সিমকো ফার্মা, রবি, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন এবং এনআরবি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৬টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএএইচ/