বর্তমান যুগে প্রযুক্তি মানবজীবনকে সহজতর করতে নিত্যনতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসছে। তারই একটি অনন্য উদাহরণ হলো হিউম্যান ওয়াশিং মেশিন। এটি একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র যা মানুষের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা এবং বিশ্রামকে সহজ, আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী করতে তৈরি করা হয়েছে।
Advertisement
কাপড় ধোয়ার কাজ সহজ করতে হ্যান্ড পাওয়ার ওয়াশিং মেশিন ১৯০৭ সালে আবিষ্কার হয়েছিল। এরপর ১৯১১ সালে মোটর চালিত ওয়াশার আবিষ্কার হয়, যা শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। তবে এবার জাপান মানুষের গোসলের কষ্ট কমাতেই আবিষ্কার করলো ‘হিউম্যান ওয়াশিং মেশিন’। সাধারণ ওয়াশিং মেশিন কাপড় ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত হলেও, হিউম্যান ওয়াশিং মেশিন মানুষের শরীরকে পরিষ্কার এবং রিল্যাক্স করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
এআই চালিত এই মেশিনটি ১৫ মিনিটেই মানুষকে ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে সক্ষম বলেই দাবি নির্মাতা সংস্থার। জাপানি কোম্পানি সায়েন্স কোং-এর তৈরি, ‘মিরাই নিঙ্গেন সেন্টাকুক’ নামে এই যন্ত্রটি একটি স্পা-এর মতো অভিজ্ঞতা দেয়। যেখানে উন্নত পানির জেট এবং পরিষ্কারের জন্য মাইক্রোস্কোপিক বায়ু বুদ্বুদ রয়েছে।
জাপানি পত্রিকা ‘আশাহি শিম্বুন’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানেই জানা যায়, এআই সিস্টেম মেশিনটি ব্যবহারকারীর ত্বকের ধরন এবং শারীরিক মেট্রিক্সের উপর ভিত্তি করে ধোয়াকাচার প্রক্রিয়াকে পার্সোনালাইজড করে। সেইসঙ্গে প্রক্রিয়া চলাকালীন শান্ত ভিজ্যুয়ালও বাজায়।
Advertisement
হিউম্যান ওয়াশিং মেশিন যন্ত্রটি প্রথমে ১৯৭০-এর দশকে জাপানের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সানইয়ো ইলেকট্রনিক দ্বারা উদ্ভাবিত হয়। যদিও তখন এটি একটি পরীক্ষামূলক ধারণা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে এই যন্ত্রটি আরও উন্নত হয়েছে এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার উপযোগী হয়েছে।
হিউম্যান ওয়াশিং মেশিনের কাজ মূলত চারটি-পরিষ্কারকরণহিউম্যান ওয়াশিং মেশিন শরীরের প্রতিটি অংশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি, সাবান বা পরিষ্কারক তরল প্রয়োগ করে এবং তারপর সেটি ধুয়ে দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে শরীরের কোনো অংশ পরিষ্কার করা বাদ না যায়।
এক্সফোলিয়েশনশরীরের মৃত কোষ অপসারণ করতে এটি হালকা ব্রাশিং বা স্ক্রাবিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর ফলে ত্বক সতেজ এবং মসৃণ হয়।
ম্যাসাজহিউম্যান ওয়াশিং মেশিনে বিল্ট-ইন ম্যাসাজিং ফাংশন থাকে। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রেশার পয়েন্ট ম্যাসাজ করতে পারে যা মানসিক এবং শারীরিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।
Advertisement
ড্রাইংপরিষ্কার প্রক্রিয়া শেষে এই যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীর শুকানোর জন্য উষ্ণ বায়ু বা শুকানোর প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
এবার আসুন জেনে নেই মেশিনটি ঠিক কীভাবে কাজ করবে-ব্যবহারকারী যন্ত্রের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং আরামদায়কভাবে শুয়ে বা বসে পড়েন। সেটার অর্ধেক অংশ ধীরে ধীরে উষ্ণ পানিতে পূর্ণ হবে। যন্ত্রটি ব্যবহারকারীর উচ্চতা, ওজন এবং শারীরিক গড়ন অনুযায়ী নিজেকে সামঞ্জস্য করে। উন্নত মডেলগুলোতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ব্যক্তি অনুযায়ী পরিষ্কারকরণ পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়।
এবার যন্ত্রটি ব্যবহারকারীর ত্বকের অবস্থা এবং প্রয়োজনীয় পরিষ্কারকরণ পরিমাণ নির্ধারণ করতে স্ক্যানিং করে। সেন্সর এবং ক্যামেরার সাহায্যে শরীরের প্রতিটি অংশের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। এরপর যন্ত্রের বিশেষ নোজল থেকে পানি এবং সাবান নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সাবান ছড়িয়ে দেয় এবং হালকা ব্রাশ বা নরম স্পঞ্জ ব্যবহার করে পরিষ্কার করে। কঠিন ময়লা বা তেলযুক্ত স্থানের জন্য শক্তিশালী পরিষ্কারকরণ মোড ব্যবহার করা যাবে।
পরিষ্কারকরণ শেষে ম্যাসাজিং পদ্ধতি শুরু হয়। বিল্ট-ইন রোলার বা ভ্যাকুয়াম ম্যাসাজ টেকনোলজি ব্যবহার করে শরীরকে রিল্যাক্স করা হয়। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পেশির চাপ কমাতে সাহায্য করে। পরিষ্কার এবং ম্যাসাজ প্রক্রিয়া শেষে যন্ত্রটি শরীরের পানি শুকানোর জন্য গরম বাতাস ব্যবহার করে। উন্নত মডেলগুলোতে এয়ার ফিল্টারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুষ্ক এবং সুগন্ধি বাতাস সরবরাহ করা হয়।
হিউম্যান ওয়াশিং মেশিনের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন- একবারে পুরো শরীর পরিষ্কার করা এবং ম্যাসাজ করার জন্য এটি অত্যন্ত দ্রুত কার্যকর। যন্ত্রটি এমনভাবে ডিজাইন করা যে শরীরের এমন সব স্থান পরিষ্কার করা সম্ভব যা হাতে করা কঠিন। এটি শুধু পরিষ্কারই করে না, বরং ম্যাসাজের মাধ্যমে শরীরের পেশি আরাম দেয়। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা, ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। বৃদ্ধ বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য এটি অত্যন্ত সহায়ক।
আরও পড়ুন ২০২৪ সালে শিশুদের করা বিস্ময়কর যত রেকর্ড জীবনের ১০০ বসন্ত পার, প্রেমের পর ঘর বাঁধলেন দম্পতিসূত্র: এনডিটিভি
কেএসকে/জিকেএস