চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে দেখা গেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরীকে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলামের পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে।
Advertisement
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশদাতা সীতাকুণ্ডের কুখ্যাত চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আইনজীবীও তিনি। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াত নেতাদের জামিনের বিরোধিতা করে আসছিলেন আদালতে।
অভিযোগ এসেছে, পতিত স্বৈরাচার সরকারের নেতাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তার নেতৃত্বেই দেখভাল করা হচ্ছে। গ্রেফতার নেতাদেরও ছাড়িয়ে আনছেন সাবেক এই মহানগর পিপি।
গেলো নির্বাচনে তিনি সীতাকুণ্ড আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে অভ্যুত্থান হওয়া নতুন বাংলাদেশে একজন স্বৈরাচারী নেতাকে অতিথি করে মঞ্চে বসানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
Advertisement
জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে এই আওয়ামী লীগ নেতাকে অতিথি করেছেন স্বয়ং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সীতাকুণ্ডে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়েছে অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দীন চৌধুরীর ওপর। আর তাকে সহযোগিতা করে চলেছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কে এম রফিকুল ইসলাম।
এদিকে ইউএনওর এমন স্বৈরাচারী আচরণে ক্ষুব্ধ বহু বিএনপি-জামায়াত নেতা। তাদের ভাষ্য, এতো এতো বিএনপি-জামায়াত নেতা থাকতে তিনি কেন অতিথি। তাকে কেন সংবর্ধনা!
অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবু তাহের, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ইউসুফ নিজামীসহ একাধিক নেতা দর্শক সারিতে বসে আছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুদ্দিন বসে আছেন মঞ্চে ইউএনও ও ওসির সঙ্গে। এক পর্যায়ে বক্তব্যও রাখেন তিনি।
Advertisement
উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ইউসুফ নিজামী বলেন, এই ফখরুদ্দিন চৌধুরী আমাদের বহু নেতাকর্মীর জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন। তার কারণে মাসের পর মাস নেতাকর্মীরা কারাগারে ছিলেন। জামিন চাইতে গেলেই তিনি বাধা হয়ে দাঁড়াতেন। বিচারক জামিন দেওয়ার মনস্থির করলেই ফখরুদ্দিন কোনো একটা বাহানা দিয়ে আবার তা নামঞ্জুর করিয়ে দিতেন। তিনি পিপি থাকাকালে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন। তার সেই ব্যবহার দুর্ব্যবহার কখনো ভুলবো না।
জেলার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সরোয়ার হোসাইন লাভলু বলেন, আমরা সরকারি আইনজীবী হয়েও দাওয়াত পাইনি। অথচ আওয়ামী লীগ নেতা দাওয়াত পেলো, তাও আবার মঞ্চের অতিথি। এটি স্বৈরাচারী অফিসারের দ্বারাই সম্ভব। এই ফখরুদ্দিন আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সব নেতাদের জামিনে বিরোধিতা করতেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আমির খসরু, আসলাম চৌধুরী, ডা. শাহাদাতসহ কেন্দ্রীয় সব নেতার জামিন হতে দেননি এই ফখরুদ্দিন।
ফখরুদ্দিন চৌধুরী ১৯৬৮ সালে নিজামপুর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর ভারতে পালিয়ে যান। ওইসময় সেখান থেকে তারা চিন্তা করছিলেন দেশে ফিরে কোনো অ্যাকশন নেওয়া যায় কি না। এক পর্যায়ে ফখরুদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন গ্লোব প্রিন্টিং প্রেসে এসে আশ্রয় নেন মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ অন্য নেতারা। সেখানে দেখা করতেন আ জ ম নাছির, সফর আলী, নঈমুদ্দিন, আবুল হাশেম, শ্রমিক নেতা সিরাজসহ সব ছাত্র নেতা। সেসময় এভাবেই ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোকে পুনর্বাসন করেছিলেন এই ফখরুদ্দিন চৌধুরী। একই কায়দায় তিনি এখন আইনজীবীর বেশে আওয়ামী পুনর্গঠনের মিশনে নেমেছেন। গুঞ্জন আছে তাকে ভারত থেকে সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছেন পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা বা তাদের কোনো দোসর কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বা অতিথি হতে পারবে না। আগে তাদের বিচার হবে। তারপর জাতি ঠিক করবে তারা রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষষণ করলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেতাদের চট্টগ্রামে এনে ফখরুদ্দিন চৌধুরী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন। তাকে উপজেলা প্রশাসনের মঞ্চে অতিথি করে আনা ঠিক হয়নি। বিষয়টি আমি দেখছি।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউওনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাওয়াত দিয়েছি। আওয়ামী লীগ নেতা কি না সেটা আমার জানা নেই।
এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জিকেএস