ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো সীমান্তে নজিরবিহীন নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করেছে। যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নিয়ন্ত্রণহীন ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা শেনেজন অঞ্চল, যা একসময় ইউরোপীয় ঐক্যের ‘মুকুট’ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন কি সংকটে পড়েছে?
Advertisement
১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গে সই হয় শেনেজন চুক্তি। শেনেজন অঞ্চলে এখন ২৫টি ইইউ ও চারটি নন-ইইউ দেশ রয়েছে। এর মূল নীতি হলো অবাধ চলাচল। কিন্তু তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
লুক্সেমবার্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিওন গ্লোডেন ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পুনর্বহালের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘লুক্সেমবার্গের জন্য এটি অগ্রহণযোগ্য। শেনজেন ইইউর অন্যতম বৃহৎ সাফল্য। আমরা মানুষের মনে আবার সীমান্ত স্থাপনের অনুমতি দিতে পারি না।
নজিরবিহীন অভ্যন্তরীণ সীমানা নিয়ন্ত্রণ
Advertisement
শেনজেন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জার্মানিও এখন তার প্রতিটি সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করছে; যা আগে শুধু দক্ষিণ সীমান্তে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমিত ছিল। ২০১৫ সাল থেকে জার্মানি এই সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে আসছে। ফ্রান্স ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সীমিতভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসও জার্মানি ও বেলজিয়ামের সঙ্গে তাদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি গত ৯ ডিসেম্বর ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়াকে পূর্ণাঙ্গ শেনজেন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার। তবে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) বারবার জোর দিয়ে বলছে, অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ‘একেবারে শেষ উপায়’ হওয়া উচিত। তবুও কয়েকটি দেশ এই নিয়ন্ত্রণকে এক দশক পর্যন্ত বাড়িয়ে রেখেছে।
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার চলমান নিয়ন্ত্রণের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, অভিবাসনের উচ্চ সংখ্যার কারণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। যতদিন জার্মানিতে (অভিবাসীর) সংখ্যা এত বেশি থাকবে, ততদিন নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, শেনজেন অঞ্চল জার্মানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে শরণার্থীদের সমান বণ্টনও প্রয়োজন।
নিরাপত্তা বনাম মুক্ত চলাচল
Advertisement
ইইউর নতুন অভ্যন্তরীণ ও অভিবাসনবিষয়ক কমিশনার অস্ট্রিয়ার মাগনুস ব্রুনার সমস্যাগুলোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের ইউরোপীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা উন্নত করতে হবে। তবে শেনজেনের আইনি কাঠামো মেনে চলার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
যখন শেনজেন ২০২৫ সালে তার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সীমান্তহীন ইউরোপের স্বপ্ন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এই টানাপোড়েনের সমাধান হবে কি না তা এখনও অনিশ্চিত। বিষয়টি ইইউর অন্যতম মূল্যবান অর্জনকে একটি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এসএএইচ