বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে কয়েকজন বিচারপতির আচরণ বিষয়ক তথ্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।
Advertisement
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থকে জানানো হয়, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বর্তমানে বেশ কয়েকজন বিচারপতি আচরণের (কনডাক্ট) বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে।
তার ধারাবাহিকতায় রোববার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্য এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
Advertisement
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। পরে একই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
গত ২০ অক্টোবর সেই রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন
উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়া কী? ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য’কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এই কাউন্সিল যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ প্রেরণ করেন। সংবিধান অনুসারে প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়।
সেই সময়ে অন্তত ১৫ জন বিচারপতিকে বিচার কাজের বাইরে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনজন বিচারপতি এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। আর একজন বিচাপতি অবসরে চলে গেছেন।
ষোড়শ সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বাতিলের আগে সংবিধানের এ সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (২) এই অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ বিধানাবলি অনুযায়ী ব্যতীত কোনো বিচারককে তাহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না।
(৩) একটি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল থাকবে যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুজন কর্মে প্রবীণ তাহাদের লইয়া গঠিত হইবে;
তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোনো সময়ে কাউন্সিলের সদস্য এরূপ কোনো বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কার্য করিতে অসামর্থ্য হন তাহা হইলে কাউন্সিলের যাহা সদস্য আছেন তাহাদের পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।
(৪) কাউন্সিলের দায়িত্ব হইবে-
(ক) বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি নির্ধারণ করা।
(খ) কোনো বিচারকের অথবা কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন সেই রূপ পদ্ধতি ব্যতীত তাহার পদ হইতে অপসারণযোগ্য নহেন এরূপ অন্য কোনো পদে আসীন ব্যক্তির সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করা।
(৫) যে ক্ষেত্রে কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যে রাষ্ট্রপতির এরূপ বুঝিবার কারণ থাকে যে কোনো বিচারক।
(ক) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে তাহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিতে অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন, অথবা
(খ) গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হতে পারেন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করতে ও উহার তদন্ত ফল জ্ঞাপন করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।
(৬) কাউন্সিল তদন্ত করার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যদি এরূপ রিপোর্ট করেন যে, উহার মতে উক্ত বিচারক তাহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হইয়া পড়েছেন অথবা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হয়েছেন তাহা হইলে রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা উক্ত বিচারককে তাহার পদ হতে অপসারিত করবেন।
(৭) এই অনুচ্ছেদের অধীনে তদন্তের উদ্দেশ্যে কাউন্সিল স্বীয় কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং পরোয়ানা জারি ও নির্বাহের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের ন্যায় উহার একই ক্ষমতা থাকবে।
এফএইচ/ইএ