জাতীয়

রিজার্ভ চুরি : এখনো সক্রিয় হ্যাকাররা!

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রোববার সুইফটের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে আরো একটি ব্যাংক হ্যাকের ঘটনার মিল পাওয়া গেছে। তবে সরাসরি ওই ব্যাংকের নাম উল্লেখ করেনি সুইফট। সুইফট এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও ব্যাংকে সাইবার হামলা বিষয়ক তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান বিএই সিস্টেমস জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকই শুধু নয়। এর আগে ভিয়েতনামের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকও এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে দু`বছর আগে সনি কর্পোরেশনের ফিল্ম স্টুডিও হ্যাকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির যথেষ্ট মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। তদন্তকারীদের দাবী এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে তৎপর রয়েছে হ্যাকারগোষ্ঠী। সুযোগ পেলে যে কোনো সময় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আবারো ব্যাংকে সাইবার হামলা চালাতে পারে তারা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার চুরি করার চেষ্টা করে অজ্ঞাত হ্যাকাররা। কিন্তু বানান ভুলের কারণে পুরো অর্থ লোপাট করতে না পারলেও তারা ৪১ ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়। ওই অর্থ এখনো পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও এর মধ্যে সামান্য কিছু অর্থ ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইন। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমের ত্রুটির কারণেই হ্যাকাররা রিজার্ভের অর্থ লুট করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থ লেনদেনের জন্য একটি আর্থিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে সুইফট। বিশ্বব্যাপী এটি প্রায় ৩ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সুইফটের এই নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকেও ব্যবহার করেছে হ্যাকাররা। তবে এই বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে সুইফট। তাদের দাবী গ্রাহকের নিরাপত্তা তাদের নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক তার কম্পিউটার সিস্টেমকে নিরাপদ না রাখলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবেই। তারা সব সময় এ বিষয়ে গ্রাহকদের সতর্ক করে আসছে। গ্রাহকের কম্পিটার সিস্টেমে ঢুকে হ্যাকাররা যদি তথ্য চুরি করে সেক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার নেই। আর এতে তাদের দোষারোপ করলেও চলবে না। বিএই`য়ের তথ্য মতে, তারা কিছু প্রমাণ পেয়েছে যাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে ব্যবহৃত ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যারের সঙ্গে মিল রয়েছে সনি হ্যাকসহ অন্যান্য কিছু হ্যাকিংয়ের ঘটনার। ২০১৪ সালে সনির ওই হ্যাকের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সেসময় এফবিআই দাবী করেছিল, সনি হ্যাকের ঘটনার পেছনে উত্তর কোরিয়া দায়ী। তবে পিয়ংইয়ং ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। এদিকে, সুইফটের এক প্রতিবেদনে ভিয়েতনামের ব্যাংকে সাইবার হামলা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তারা বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকিংয়ে ম্যালওয়্যার যেভাবে কাজ করেছিল ভিয়েতনামের ব্যাংকও একই কায়দায় হ্যাক করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকিংয়ের সময় লেনদেনের তথ্য পরিবর্তন, বিশ্লেষণ ছাড়াও বেশ কিছু তথ্য মুছে ফেলেছিল হ্যাকাররা। সনি হ্যাকের সময় ব্যবহৃত সফটওয়্যারের মধ্যেও একই বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছিল। এতে করে তথ্য বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল।টিটিএন/এমএস

Advertisement