দেশজুড়ে

৫ কোটি টাকার ভবনে আয় নেই, উল্টো প্রতিমাসে ব্যয় ১২ হাজার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার রাজস্ব বাড়াতে আড়াই বছর আগে নির্মাণ করা হয় চারতলা ভবন। কথা ছিল, বিশ্বব্যাংকের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত ভবনটি ভাড়া দিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ করবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাজস্ব বৃদ্ধি দূরে থাক, উল্টো ভবনটির তদারকির কাজে প্রতিমাসে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে ব্যয় করতে হচ্ছে ১২ হাজার টাকা।

Advertisement

সেইসঙ্গে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চেপেছে ভবনে সংযোগ দেওয়া বিদ্যুৎ বিলের টাকা। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ভবনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। শুধু তাই নয়, নবনির্মিত এ ভবনের ওপরের বেশিরভাগ কাচ ও গ্রিল ভেঙে পড়েছে।নির্মাণের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সীতাকুণ্ড পৌরসভার নির্মিত এই ভবন।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে সর্বসাধারণের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। পৌরসভার সাধারণ পরিষদে এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি এবং রেজ্যুলেশন করা হয়। কিন্তু সে কমিটি এখনো ভবনটি ভাড়া দিতে পারেনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভবনটি কী কারণে নির্মাণ করেছে, তা তারা জানেন না। ভবনটি কখনো কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়নি।

Advertisement

পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস প্রজেক্টের (এমজিএসপি) আওতায় চার তলাবিশিষ্ট ভবনটির শুরুতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এরপর ৪ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের ১০ জুন ভবনটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতষ্ঠিান নিপা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি হয়। পরের বছর ১৫ মার্চ শুরু হয় ভবনটির নির্মাণকাজ। তিন বছর পর নির্মাণকাজ শেষে ২০২২ সালের ২৪ মে ভবনটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট সারাদেশের মতো সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বদিউল আলমকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই দিন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তা পরিবর্তন করে ২৩ সেপ্টেম্বর ইউএনওকে প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পৌরসভার কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করা হয়।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুই বছর আগে নির্মাণকাজ শেষে কর্তৃপক্ষকে বুঝে দেওয়া হয়। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ভবনটি আর ভাড়া দেওয়া হয়ে ওঠেনি। ফলে এটি থেকে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্য ছিল, তা উল্টো লোকসানে পরিণত হয়েছে। এখন আয়ের পরিবর্তে পৌর কর্তৃপক্ষকে ভবনের পেছনে প্রতিমাসে উল্টো ব্যয় করতে হচ্ছে।’

পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনের বিষয়টি নিয়ে আমি পৌরসভার সচিবসহ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছি। খুব শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Advertisement

এম মাঈন উদ্দিন/এসআর/জিকেএস