নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা একটি মানহানির মামলায় তাকে দেড় কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম এবিসি নিউজ। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, এবিসি নিউজের একজন তারকা সঞ্চালক ট্রাম্পকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে ‘ধর্ষণের দায়ে দোষী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। খবর বিবিসির।
Advertisement
জর্জ স্টেফানোপোলাস নামের ওই সঞ্চালক চলতি বছরের ১০ মার্চ সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় বারবার এই মন্তব্য করেছেন। তিনি একজন নারী সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই নারী সদস্য কেন ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সে বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
গত বছর এক দেওয়ানি মামলায় জুরি বলেছিলেন যে, ট্রাম্প যৌন হয়রানির জন্য দায়ী কিন্তু ধর্ষণের জন্য দায়ী নন। কারণ নিউইয়র্কের আইনে যৌন নির্যাতনের আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে।
শনিবারের এই মীমাংসার অংশ হিসাবে এবিসি নিউজ একটি বিবৃতি প্রকাশ করবে যেখানে স্টেফানোপোলাসের মন্তব্যের জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম রিপোর্ট করেছে ফক্স নিউজ ডিজিটাল।
Advertisement
সমঝোতা অনুযায়ী, এবিসি নিউজ একটি ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফাউন্ডেশন এবং মিউজিয়াম’ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার দান করবে, যা মামলার বাদী ট্রাম্প বা তার পক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হবে যেমনটা আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা করেছিলেন।
এছাড়া আরও এক মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে ট্রাম্পের আইনগত খরচের জন্য। মীমাংসার শর্তানুসারে, এবিসি নিউজ চলতি বছরের ১০ মার্চ অনলাইনে প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনের নিচে এডিটরের একটি নোট যোগ করবে।
এতে লেখা থাকবে, এবিসি নিউজ এবং জর্জ স্টেফানোপোলাস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে ১০ মার্চ ২০২৪ এবিসির ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে জর্জ স্টেফানোপোলাসের সঙ্গে প্রতিনিধি ন্যান্সি ম্যাসের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত।
এবিসি নিউজের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, কোম্পানি খুশি যে উভয় পক্ষ আদালতে দাখিল করা শর্ত অনুযায়ী মামলা মিটমাট করেছে।
Advertisement
২০২৩ সালে নিউ ইয়র্কের এক দেওয়ানি আদালত অভিযোগ তুলেছিল যে, ট্রাম্প ১৯৯৬ সালে একটি দোকানের ড্রেসিং রুমে ই. জিন ক্যারলকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। ওই ম্যাগাজিনের কলামিস্টকে মানহানির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
বিচারক লুইস ক্যাপলান বলেন, জুরির সিদ্ধান্ত ছিল যে ক্যারল প্রমাণ করতে পারেননি যে ট্রাম্প তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। মূলত নিউইয়র্ক দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে।
বিচারক ক্যাপলান আরও বলেন, সাধারণ ভাষায়, অভিধানে এবং অন্য আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা যেভাবে দেওয়া হয়েছে সেই তুলনায় নিউইয়র্কের আইনে এর সংজ্ঞা ‘অনেক বেশি সংকীর্ণ’।
পৃথক আরেকটি মামলায় একই বিচারকের অধীনে জুরি ক্যারলের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্যের জন্য ট্রাম্পকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিল।
১০ মার্চের ওই টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সম্প্রচারে স্টেফানোপোলাস দক্ষিণ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান নারী সদস্য ন্যান্সি ম্যাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি কীভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন করতে পারেন। উপস্থাপক বলেছিলেন, বিচারক এবং দুটি পৃথক জুরি ট্রাম্পকে ধর্ষণের জন্য দায়ী বলেছে। কিন্তু তার দেওয়া এই তথ্য ভুল ছিল। স্টেফানোপোলাসের পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে এই কথা অন্তত ১০ বার বলেছেন।
আরও পড়ুন: শপথ অনুষ্ঠানে শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানালেন ট্রাম্প সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে ‘সরাসরি যোগাযোগ’ করছে যুক্তরাষ্ট্রট্রাম্প কমলা হ্যারিসের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কার নিয়ে ‘প্রতারণামূলক আচরণ’ করার জন্য বিবিসির মার্কিন সম্প্রচার অংশীদার সিবিএস-এর বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। ২০২৩ সালে সিএনএনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মানহানি মামলা খারিজ করে দেন এক বিচারক। ওই মামলায় ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, নেটওয়ার্কটি তাকে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছে। তিনি নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের বিরুদ্ধেও মামলা করেছিলেন। যদিও মামলাগুলো পরে খারিজ হয়ে যায়।
টিটিএন