ইউনিয়ন ঘোষণার পর ১৪ বছর হতে চললেও এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গড়ে ওঠেনি পাকা সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট। দুটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ হলেও সেটি এখন জরাজীর্ণ। ফলে চরম দুর্ভোগে প্রায় ১২ হাজার মানুষ। বলা হচ্ছিল ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের কথা।
Advertisement
ইউনিয়নবাসী জানান, প্রায় শতবছর ধরে জনবসতি গড়ে উঠেছে এই ঢালচরে। এরমধ্যে ইউনিয়ন ঘোষণা হয় ২০১০ সালের দিকে। এখানকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মোটরসাইকেল।
শুরু থেকেই ঢালচর ইউনিয়নে কোনো পাকা সড়ক নেই। তবে ২০২৩ সালের দিকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ইটের রাস্তা তৈরি করে দেয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তাটি। শুধু রাস্তাই নয়, ঢালচরে গড়ে উঠেনি কোনো পাকা ব্রিজ ও কালভার্ট। তবে ২০২১ সালের দিকে এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ হলেও সেটি এখন জরাজীর্ণ।
ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মোসলেউদ্দিন, মো. জসিম উদ্দিন ও মো. মোস্তাফিজ আক্ষেপ করে বলেন, দেশে এত সরকার এলো গেলো, কিন্তু ঢালচরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। কোনো সরকারের আমলে ঢালচরে পাকা সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট হয়নি।
Advertisement
তারা জানান, গত বছর ইটের রাস্তা হয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড় রিমালের জোয়ারের পানিতে ভেঙে যায়। এই জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
ঢালচরে ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেল চালক মো. সোহেল ও ইউসুফ বলেন, ইটের ভাঙা রাস্তা দিয়ে যাত্রী নিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকিতে চলাচল করি। রাস্তার কোনো পাশে ইট নেই। আবার কোনো পাশে ইট বাঁকা অবস্থায় আছে। ফলে যাত্রী নিয়ে চলার পথে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
দুর্ঘটনার শিকার আহত যাত্রী আব্দুল কাদের ও মো. আলাউদ্দিন জানান, তারা মোটরসাইকেল করে আনন্দ বাজার থেকে তারুয়া এলাকায় যাওয়ার সময় ভাঙা রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হন। পরে তাদের চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে হয়।
তারা বলেন, যদি আমাদের ঢালচরে পাকা রাস্তা থাকতো তাহলে এমন দুর্ঘটনার শিকার হতে হতো না। আমরা সরকারের কাছে পাকা সড়ক চাই।
Advertisement
মো. মিজান ফরাজি, জান্নাত বেগম, মো. আইয়ুব ব্যাপারী বলেন, ঢালচরে আনন্দ বাজার থেকে মাঝের চর বাজার ও তারুয়া যেতে দুটি গাছের সাঁকো ছিল। পরে ২০২১ সালে কাঠের ব্রিজ নির্মাণ হলে কষ্ট কিছুটা কমে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্রিজ দুটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন করছি, ঢালচরে যেন পাকা ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করে দেয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ও মো. শাহে আলম ফরাজি জানান, ভোলার ঢালচর ইউনিয়নের চারদিক বন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে পরিচিত। এছাড়া ঢালচরের তারুয়া সমুদ্র সৈকতটি দেশের দ্বিতীয় কক্সবাজার নামেও পরিচিত। এখানে উন্নয়ন হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করবেন।
ভোলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহীম খলীল বলেন, ঢালচর বিচ্ছিন্ন একটি ইউনিয়ন হওয়ায় আগে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। তবে এবার ইউনিয়নটির উন্নয়নের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। আশা করি, ঢালচর ইউনিয়নে পাকা সড়ক ও ব্রিজ কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হবে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/জেডএইচ/এমএস