ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হলেও দুটি ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে ২৯৪ রান আর শেষ ম্যাচে আরও বেশি ৩২১ করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছে যথাক্রমে ৫ ও ৪ উইকেটে।
Advertisement
কৌশলগত নানা ভুলের কারণে সিরিজ হারলেও অনেকে সামগ্রিক পারফরম্যান্স ও অ্যাপ্রোচকে খুব নেতিবাচক চোখে দেখতে নারাজ। দেশের অন্যতম ক্রিকেটবোদ্ধা ও বর্তমান বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দেখে তাই হতাশ নন। তার কাছে মনে হয় এ সিরিজ হতে পারে আগামীর আলোকবর্তিকা। একই ধারণা পোষণ করেন দেশের আরেক নিবেদিতপ্রাণ ও ক্রিকেট প্রশিক্ষক খালেদ মাহমুদ সুজনও।
দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সিনিয়র ও সফল কোচ সুজন মনে করেন, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্তর মতো পরিনত ও অভিজ্ঞ পারফরমার ছাড়া যে দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে, সেটা প্রায় এক নতুন দল। যে দলে মাহমুউল্লাহ রিয়াদই একমাত্র অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সেই দল নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যে পারফরম্যান্স করেছে, তা মোটেও খারাপ নয়।
সিরিজের ফলাফল সন্তোষজনক না হলেও ব্যাটারদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট সুজন। আবাহনীর কোচ সবচেয়ে খুশি মোহাম্মদ সালাউদ্দীনকে কোচ হিসেবে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করতে দেখে।
Advertisement
সুজনের অনুভব, ‘সালাউদ্দীন ব্যাটিং কোচ হওয়ার পরই ক্রিকেটারদের ব্যাটিংয়ের উন্নতি ছোঁয়া লেগেছে। তানজিদ তামিম দুটি ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করেছে। সৌম্য সরকারও একটি ভালো ইনিংস খেলেছে। এর বাইরে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ, অভিজ্ঞ রিয়াদ ও তরুণ জাকের আলী অনিকের ব্যাট থেকে বেশ কটি ভালো ও কার্যকর ইনিংস বেরিয়ে এসেছে।’
তার ধারণা, এক ঝাঁক ব্যাটারের একসঙ্গে ভালো খেলা সম্ভব হয়েছে সালাউদ্দীন কোচ হওয়ার কারণেই। সুজন বলেন, ‘আমি বলবো ছেলেরা ভালোই খেলেছে। আমার কাছে ভালো লেগেছে মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের কোচিং প্যানেলে অন্তর্ভূক্তি। ব্যাটিং কোচ হিসেবে সালাউদ্দীন প্রথমবার কাজ করেছে জাতীয় দলের সঙ্গে। সে কোচ হিসেবে দলে আসার পর ব্যাটিংটা ভালো হয়েছে।’
সুজন মনে করেন, ‘সালাউদ্দীন ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের ব্যাটিংয়ে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। জন পাঁচেক ব্যাটার প্রায় এক সঙ্গে ভালো খেলতে শুরু করেছেন। এতে করে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশের কোচরা কোচিং করাতে পারেন। সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সালাউদ্দীন। এটা খুব ভালো ব্যাপার। তাদের কোচিংয়ে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আছে। দলকে কিছু দিতে পারেন। তাদের কোচিংয়ে ছেলেদের উন্নতি হয়।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের দাবি, ‘আমার মনে হয়, ব্যাটিংয়ে সালাউদ্দীনের কোচিংয়ে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট দেখে এখন বোলিং কোচ হিসেবেও আমাদের লোকাল কাউকে নেওয়া যায়। সেটাই ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুজন বলেন, ‘আশা করি, বর্তমান বিসিবি সভাপতি ফারুক ভাই সেটা আমলে আনবেন। ব্যাটিং কোচ সালাউদ্দীনের পর আমরা একজন দেশি বোলিং কোচও পাবো। সেটা বরং ভালো হবে। ফারুক ভাই আশা করি চিন্তা করবেন।’
Advertisement
সিরিজের প্রথম ও শেষ ম্যাচ নিয়ে সাবেক টিম ডিরেক্টর বলেন, ‘আমরা দুই ম্যাচে অ্যারাউন্ড ৩০০ ও ৩০০+ রান করেও জিততে পারলাম না কেন? শেষ ম্যাচে ৩২১ রান করে কিয়েসি কার্টি ও শারফেন রাদারফোর্ড সহ ক্যারিবীয় মূল ব্যাটিং স্তম্ভদের আউট করে দিয়েও কেন জিততে পারলাম না। তারপরে একজন (আমির জাঙ্গু) এসে ম্যাচ জিতিয়ে দিল। আমি ঠিক জানি না, আমাদের বোলিং প্ল্যান কী ছিল। তবে মনে হয়, পরিকল্পনা যাই থাকুক না কেন, আমরা তার প্রয়োগটা যথাযথভাবে পারিনি।’
তারপরও সুজনের উপলব্ধি, সামগ্রিকভাবে দল খারাপ খেলেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো খেলেছি। কিন্তু হোয়াইটওয়াশের বদলে ম্যাচ জেতা উচিত ছিল। একটি নয় দুটি ম্যাচে আমাদেরই জেতা উচিত ছিল। এমনকি ২-১ সিরিজ জেতাও উচিত ছিল। ছোট খাটো কিছু ভুল হয়ে গেছে।’
এমএইচ/এমএস