সুনামগঞ্জের হাওরে পানি কমতে শুরু করেছে। ভেসে উঠছে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হাওরে এই বাঁধ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে প্রকল্প ও ব্যয় নির্ধারণের জন্য জরিপ কাজ শুরু করেছে। তবে এবার প্রথম পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণ কাজে ১২৪ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জরিপ কাজ চূড়ান্ত হলে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়বে।
Advertisement
ভাটির জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের ভাগ্য নির্ভর করে হাওরের বোরো ধানের ওপর। ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় এই অঞ্চলের শতভাগ ফসলহানির পর মহা দূর্যোগে পড়েন জেলার কৃষকরা। তাদের সেই দুঃখ ও কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারদিক। ফাটল ধরে গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের অর্থনীতিতে। পরে তড়িঘড়ি করে তৎকালীন সরকার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা গঠন করে। যেখানে ঠিকাদারি প্রথা বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পিআইসির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের নিয়ম করা হয়।
তবে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের নীতিমালা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইস) গঠনের কাজ শেষ করার কথা। তবে চলতি মাসের শুরুতে হাওর থেকে পানি ধীর গতিতে নামায় জরিপ কাজ শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ পরে। গত ৬ নভেম্বর থেকে জেলার ১২টি উপজেলায় ২৫টি দল জরিপ কাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার ছোটবড় ১৩৪টি হাওরে প্রতি বছর সোয়া দুই লাখ হেক্টরের মতো জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এসব হাওরে বেড়িবাঁধ আছে এক হাজার ৭১৮ কিলোমিটার। পাউবো বাঁধ নির্মাণের কাজ করে ৫৩টি হাওরে। এবার এক হাজার ১৬২ কিলোমিটার বাঁধের জরিপ কাজ হবে। এখন পর্যন্ত জরিপ হয়েছে ৫২৮কিলোমিটার। এরপর প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন হবে।
Advertisement
এদিকে জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে এ বছর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৮টি প্রকল্পের জন্য চার কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, তাহিরপুরে ৭৬টি প্রকল্পের জন্য ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা, জামালগঞ্জে ৪০টি প্রকল্পের জন্য সাত কোটি ১৬ লাখ টাকা, বিশম্ভরপুরে ২৫টি প্রকল্পের জন্য তিন কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ধর্মপাশায় ৮৬টি প্রকল্পের জন্য ১৯ কোটি ১৫ লাখ দুই হাজার টাকা, মধ্যনগরে ৩৪টি প্রকল্পের সাত কোটি ২৮ লাখ তিন হাজার টাকা, জগন্নাথপুরে ৩৯টি প্রকল্পের জন্য ছয় কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, শান্তিগঞ্জে ৬৩ প্রকল্পের জন্য নয় কোটি ৮৬ লাখ তিন হাজার টাকা, ছাতকে ২৮টি প্রকল্পের তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা, দোয়ারাবাজারে ৪৭ প্রকল্পের জন্য সাত কোটি ৭৪ লাখ টাকা, দিরাইয়ে ৯৪টি প্রকল্পের জন্য ২৪ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা এবং শাল্লা উপজেলায় ১১৫টি প্রকল্পের জন্য ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
তবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক আকমল আলী, সাহাদত হোসেন, আমির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ আর বাঁধের কাজ নির্মাণে তেমন অগ্রগতি না থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। আমরা চাই দ্রুত বাঁধ নির্মাণ হোক ও ভালো করেই যেন বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা মুক্তিযুদ্ধা আবু সুফিয়ান জাগো নিউজকে বলেন, বাঁধের কাজ যেভাবে নির্মাণ করার কথা সেইভাবে নির্মাণ হচ্ছে না। সেইসঙ্গে চলতি বছর বাঁধের কাজ অনেকটাই দুর্বল হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। হাওর থেকে পানি নামার গতিও ভালো। আমরা ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করবো। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
Advertisement
এফএ/এএসএম