শরীয়তপুরের জাজিরায় গত ৩ নভেম্বর ধস শুরু হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নদীরক্ষা বাঁধে। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে নদীতে বিলীন হয় বাঁধটির অন্তত ১০০ মিটার অংশ। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও বাঁধ রক্ষায় ঠেলাঠেলি করছে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
একদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হস্তান্তর করেনি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। আর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) বলছে প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ায় দায়দায়িত্ব নেই তাদের। তাদের এমন ঠেলাঠেলিতে বিপাকে পড়েছেন ভাঙন কবলিত মানুষেরা। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে হস্তান্তর করেনি বিবিএ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায় পানিতে। এছাড়াও এলাকারটির আশপাশে ফাটল দেখা দেয়। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাঁধের ধস ঠেকাতে এগিয়ে আসেনি সংশ্লিষ্ট কেউ। ধস ঠেকাতে মাঝিরঘাট এলাকায় ধসে পড়া স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের ধসে যাওয়া অংশের সংস্কার, নদী শাসন ও নতুন বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা আরিয়ান সাগর বলেন, যেহেতু এটি পদ্মা সেতুর খুব কাছাকাছি এলাকা, ভাঙনের পরে আমরা ভেবেছিলাম দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করা হবে। কিন্তু এক মাস পার হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। নতুন করে ভাঙনের শঙ্কা এখনো রয়েছে। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট যারাই আছে তারা যেন দ্রুত একটা ব্যবস্থা নেয়।
মোফাজ্জেল মাঝি নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, বাঁধটি যে কোনোভাবে সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন। আমরা এখন ভাঙন আতঙ্কে আছি। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা হোক।
এ বিষয়ে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, ধসে পড়া স্থানটি বিবিএর নদী শাসনের আওতাভুক্ত। গত বছরের শুরুতে আমরা ওই স্থানটি ডান তীর রক্ষা বাঁধের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিবিএর কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তখন তারা রাজি হয়নি। বর্তমানে আমাদের কোনো বরাদ্দ না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। আমরা বিষয়টি পরিষ্কারভাবে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) মো. শারফুল ইসলাম সরকার বলেন, ধসে পড়া স্থানটি আমাদের অধিগ্রহণ এলাকার নয়। তৎকালীন সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (বিএম মোজাম্মেল হক) সুপারিশে প্রকল্পের বাইরেও ওই স্থানে বাঁধটি নির্মাণ করেছিলাম। আমরা অধিগ্রহণের বাইরে নদীতে কোনো কাজ করি না, সেখানে কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আমাদের মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছে। ওনারা ব্যবস্থা নেবে।
Advertisement
এফএ/এএসএম