রাশিয়া সফরে দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। দেশের বাইরে বলতে এর পূর্বে ভারতের কলকাতা শহর ঘোরার সুযোগ হয়েছিল আমার। সুতরাং বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় চাপা উত্তেজনা ছিল আমার মধ্যে।
Advertisement
ঢাকা থেকে প্রথমে মস্কো তার পর আবার মস্কো থেকে সোচি। সুতরাং বিমানবন্দরের বাইরে রাশিয়া প্রবেশ আমার সোচি শহর দিয়ে। রাশিয়ার সুন্দরতম অঞ্চলের একটি সোচি। কৃষ্ণসাগরের তীরে এই এলাকায় আছে পর্বতমালা আর সাগরের দারুণ মিতালি। তার সঙ্গে আছে দারুণ এক আবহাওয়া যেখানে শীত ও বৃষ্টির দারুণ খেলা চলে। ফেব্রুয়ারিতে মোটামুটি মৃদু শীত আর বৃষ্টির মিতালির অভিজ্ঞতা হলো আমার।
সোচির কিছুটা বর্ণনা দিতে চাইলে পাঠকদের জন্য বলতে হয় সোচি, ক্রাসনোদার ক্রে (অঞ্চল), দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ার শহর। শহরটি প্রধান ককেশাস পর্বতশ্রেণীর পশ্চিম অংশের পাদদেশে কৃষ্ণ সাগর উপকূল বরাবর প্রসারিত। সোচি ১৮৯৬ সালে প্রাক্তন নাভাগিন্সকোয়ে দুর্গের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৯০২ সালে একটি অবলম্বন এলাকা হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
খনিজ স্প্রিংস , আকর্ষণীয় উপকূলীয় ও পর্বত দৃশ্য, দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত ও উষ্ণ (আর্দ্র উপক্রান্তীয়) জলবায়ুর উপস্থিতি সোচিকে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন করে তুলেছে। যা রাশিয়ানদের কাছে অবসর কাটানোর জন্য জনপ্রিয় স্থান।
Advertisement
রাশিয়ান সরকারের একটি প্রধান বিনোদন স্থান কৃষ্ণসাগর উপকূল বরাবর উত্তর-পশ্চিমে কাছাকাছি ডাগোমিসে অবস্থিত। সোচি শহরে ২০১৪ সালে অলিম্পিক শীতকালীন গেমস অনুষ্ঠিত হয়, যার জন্য শহর ও সোচির পূর্বে ককেশাসের ক্রাসনায়া পলিয়ানা পর্বত এলাকায় খেলাধুলা ও থাকার জায়গা তৈরি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন ইতালি ভ্রমণে ঘুরে দেখুন বিখ্যাত ৫ জাদুঘর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’এজন্য সেখানে নির্মিত হয়েছে কয়েক ডজন হোটেল, পর্যটনকেন্দ্র ও ক্যাম্পসাইট। আছে ৫০টিরও বেশি স্যানিটোরিয়াম। এখানে প্রাথমিক শিল্প হলো খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, যদিও শহরের অল্প সংখ্যক শ্রমিক শিল্পে নিযুক্ত। সোচির রাস্তা ও বাগানগুলো বহিরাগত উপক্রান্তীয় গাছ ও গুল্ম দিয়ে ভরা।
আমি মস্কো থেকে বিমানে প্রায় তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে সোচি বিমানবন্দরে অবতরণ করি। এরপর সেখানে আমাদের বরণ করে নিতে উপস্থিত হন কয়েকজন তরুণ। তাদের সঙ্গে সেখানেই কিছুটা সময় পার করলাম। কিছুটা গল্প আড্ডা শেষে মূল গন্তব্যে যাত্রার পালা।
বিশ্ব যুব উৎসবে সোচি শহরে আমাদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় বারখায়ে সৃজনী নামক হোটল। বিমানবন্দর থেকে বাসে করে গন্তব্যে যাওয়ার সময় সোচি শহরের গোছানো আর পরিপাটি সৌন্দর্য মায়া বাড়িয়ে দেয়। রাস্তার চারপাশের স্থাপনা, দূরের পাহাড় কিংবা টিলার মধ্যে স্থাপনা সব কিছু গোছানো আর নান্দনিক।
Advertisement
কারুকার্যখচিত শিল্পীর ছোঁয়ার মতো করে সাজানো সোচির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে সে অপেক্ষায় মন তখন শিহরিত। ইউরোপের স্থাপনার সঙ্গে সাদৃশ্য আছে রাশিয়ার স্থাপনার। সোচির স্থাপনাও তার প্রমাণ দেয়। দেখতে দেখতে ২০ মিনিটের যাত্রা শেষে পৌঁছে গেলাম আমাদের জন্য বরাদ্দ গন্তব্যে।
হোটেলে নিজের জন্য বরাদ্দ থাকা ঘরে জিনিসপত্র রেখে কিছুটা বাইরে পায়চারি করে রাশিয়ার ভূ-খণ্ডকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করলাম নিজের উপস্থিতির। প্রায় ৭ দিন কাটবে আমার সোচিতে। সুতরাং নির্দিষ্ট সিডিউডের বাইরে আশপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনাও সাজিয়ে নিলাম প্রথম দিনেই।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জও আছে। বারখায়ে সৃজনী থেকে কৃষ্ণসাগর খুব নিকটে। এটি সাধারণ একটি হোটেল ভবন নয়, বিস্তৃত এলাকা নিয়ে পরিকল্পিত নগরীর মতো করে গোছানো হোটেলটি।
আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের তরুণরাও এখানে থাকছেন। তাদের সঙ্গেও প্রথম দিনে অল্প স্বল্প আলাপচারিতা হলো। সবকিছু মিলে এক দীর্ঘ বিমানযাত্রার ইতি ঘটে নতুন যাত্রা শুরু হলো সোচিতে। পরের পর্ব পড়ার জন্য জাগোনিউজ২৪ এর সঙ্গে থাকুন।
জেএমএস/জিকেএস