দেশজুড়ে

টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন, তবুও আসছে বিল!

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সেবা পাচ্ছেন না বহু গ্রাহক। বছরের পর বছর ধরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও প্রতিমাসে তাদের টেলিফোনের (ল্যান্ডফোন) বিল আসছে। এমন ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। এতে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন গ্রাহকরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার আঠারবাড়িতে রয়েছে ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। ১৯৯৬ সালে প্রায় এক একর আয়তনের জমিতে অ্যানালগ (বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড) হিসেবে স্থাপিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ১ জুলাই বিটিবিকে পুনর্গঠন করে নাম দেওয়া হয় ‘বিটিসিএল’। ২০১১ পর্যন্ত কোনোমতে বেশ কয়েকটি টেলিফোন সংযোগ চালু থাকলেও এরপর থেকে পুরোপুরি অচল হয়ে যায় টেলিফোন সংযোগ।

আঠারবাড়িতে ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় রয়েছে ৩৭৫টি টেলিফোন সংযোগ। সেখানে রয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ। বিকল্প হিসেবে রয়েছে উচ্চমানের ব্যাটারির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেবা না পাওয়া সত্ত্বেও ১৩ বছর ধরে বিলের কাগজ আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

আঠারবাড়ির বাসিন্দা রঞ্জু ভূইয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হওয়ার পর আমি সংযোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সংযোগ ঠিক না থাকায় দীর্ঘ বছর ব্যবহার করতে পারিনি। পরে আবেদন করে গ্রাহকদের তালিকা থেকে আমার নাম সরিয়েছি। তবে নেটওয়ার্ক না পেলেও অনেকে আবেদন করে এখনো বিচ্ছিন্ন করেননি।’

Advertisement

শাহীন নামের আরেকজন গ্রাহক জানান, অনেক গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন। তার টেলিফোনে সংযোগ না পেলেও বকেয়া বিল আসতে থাকে। পাঁচ বছর আগে সাত মাসের বকেয়া বিল পরিশোধ করে ময়মনসিংহের বিটিসিএল কার্যালয়ে আবেদন করেন। এরপর থেকে তার নামে আর বিল আসছে না। বিকল্প হিসেবে তার মতো অনেকেই মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

আঠারবাড়িতে ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জে মাস্টাররোলে কাজ করেন আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, তিন বছর ধরে তিন হাজার টাকা বেতনে এখানে কাজ করছেন। বছরখানেক আগে এখানে বেশকিছু উন্নতমানের অত্যাধুনিক ডিজিটাল যন্ত্র বসানো হয়েছে। কিন্তু যে কাজের জন্য বসানো হয়েছে সেই সংযোগই নেই। প্রায় সব লাইনই অচল।

বিটিসিএল ময়মনসিংহের কার্যালয় সূত্র জানায়, আঠারবাড়িতে অবস্থিত ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় ৩৭৫ জন গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে উপজেলার সরকারি অফিসগুলো ছাড়া অন্য কিছু গ্রাহকদের সংযোগ চালু থাকলেও নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ টেলিফোনের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তবুও বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য কাগজ পাঠানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিসিএল ময়মনসিংহের উপসহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল মুকিত বলেন, আঠারোবাড়ি সংযোগটির ট্রান্সমিশন লিংকটি নেত্রকোনার কেন্দুয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। সেখানকার সড়কের কাজ করার সময় ২০২১ সালে সংযোগ লাইন কাটা পড়ে। তখন থেকেই কার্যত সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

Advertisement

সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরও বিল আসার বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করতে তাদের আবেদন করতে হবে। তারা আবেদন করেননি বলেই নিয়ম মেনে প্রতিমাসে টেলিফোনের জন্য ন্যূনতম ১৭৩ টাকা বিল পরিশোধ করতে হবে। এই বিল পরিশোধ না করলে মামলা পর্যন্ত হতে পারে।

তবে গ্রাহকদের ভোগান্তি নিরসনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে আব্দুল মুকিত বলেন, প্রধান কার্যালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হওয়া টেলিফোনের গ্রাহকদের নাম স্থায়ীভাবে বাদ দিতে চেষ্টা চলছে।

এসআর/এমএস