কবি মাহমুদ নোমান সম্পাদনা করেন শিল্প ও সাহিত্যের কাগজ ‘দেয়াঙ’। নামটি দেখেই পছন্দ হয়ে যায় আমার। পরে জানলাম দেয়াঙ একটি পাহাড়ের নাম। দেয়াঙ পাহাড় (দিয়াং নামেও পরিচিত)। চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক পাহাড়। এটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী বর্তমান আনোয়ারা-কর্ণফুলীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এ অঞ্চলেই আরাকানিদের চাটিগাঁ দুর্গ ও দেয়াঙ কারাগার অবস্থিত ছিল। যে কারাগারে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে মহাকবি আলাওল আরাকানিদের হাতে ধরা পড়ে বন্দি ছিলেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজদের আগমনের পর অঞ্চলটি ‘ফিরিঙ্গি বন্দর’ নামে পরিচিত ছিল। সে অনেক কথা, আমি শুধু ছোটকাগজের দেয়াঙের কথাই বলবো।
Advertisement
সম্পাদক মাহমুদ নোমান এর আগেও বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা করেছেন। তার ‘প্রিয় নদী’ সংখ্যাও পাঠকমহলে আলোড়ন তুলেছিল। তবে এবারের বিষয় ‘প্রিয় ধান’। সংখ্যাটি হাতে পেলাম দুদিন আগে। খুলে দেখতেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ধান নিয়ে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধে সমৃদ্ধ একটি সংখ্যা। আমারও লেখার কথা ছিল। তবে সময় করে উঠতে পারিনি। আমারই জন্মস্থান মাদারীপুরের ধান নিয়ে লিখেছেন কালকিনির সাদীপুরের সন্তান স্বপঞ্জয় চৌধুরী। তার লেখাটি পড়ে কিছুটা দায়মুক্ত হলাম।
এই সংখ্যায় ধান বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন আমীন আল রশীদ, মৃত্যুঞ্জয় রায়, মঈন শেখ, ইলিয়াস বাবর, কুশল ভৌমিক, সৌম্য সালেক, ইমরান মাহফুজ, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, আজিজ কাজল, ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া এবং এলড্রিক বিশ্বাস। সাতাশটি অঞ্চলের প্রিয় ধান নিয়ে লিখেছেন সাতাশ জন কবি-লেখক। গপ্ লিখেছেন আজহারুল ইসলাম এবং দেলোয়ার জাহান। ভাতের গল্প লিখেছেন গৌতম বিশ্বাস, রওনক আফরোজ, আলমগীর খোরশেদ এবং মাহমুদ নোমান।
ভারতের কবি অনামিকা চক্রবর্তী, শঙ্করানন্দ, ঊর্মিলা শুক্লা, বিদ্যা গুপ্তা, জ্যোৎস্না বেনার্জি আডওয়ানীর কবিতা অনুবাদ করেছেন মিতা দাস। এ ছাড়া ভাতের কবিতা বিভাগে স্থান পেয়েছে সালেম সুলেরী, শাহীন রেজা, নূরুল হক, রবীন বসু, জেবুন্নেছা জোৎস্না, পীযূষকান্তি বিশ্বাস, তাপসী লাহা, সাজ্জাদ বিপ্লব, ফারুক ওয়াসিফ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, আভা সরকার মণ্ডল, শারদুল সজল, ধীমান ব্রহ্মচারী, মজনু মিয়া, রুনা আফসানা, পিয়াংকী, নাদিম মাহমুদ, জহুরা বেগম, চন্দনা ভট্টাচার্য, মাহফুজ রিপন, সাজ্জাদুর রহমান, মৃণালিনী এবং এস ডি সুব্রতর কবিতা।
Advertisement
আরও পড়ুন
প্রকাশিত হলো ছোটদের পত্রিকা ‘কানামাছি’ ভূমিহীনরাই যে গল্পে ভূমিপুত্রসংখ্যাটিতে নোয়াখালীর ধান, বেনাপোলের ধান, রংপুরের ধান, মধুপুরের ধান, বরিশালের ধান, ঝিনাইদহের ধান, পাবনার ধান, নেত্রকোনার ধান, চট্টগ্রামের ধান, চাপাইনবাবগঞ্জের ধান, চলনবিলের ধান, কিশোরগঞ্জের ধান, রাজবাড়ির ধান, বরগুনার ধান, বেগুন বিচি ধান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের ধান, সিরাজগঞ্জের ধান, মৌলভীবাজারের ধান, ময়মনসিংহের ধান, সিলেটের ধান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধান, শরীয়তপুরের ধান, সুনামগঞ্জের ধান, মাদারীপুরের ধান, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ধান, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর ধান এবং আশুলিয়ার ধান শিরোনামে লেখা স্থান পেয়েছে। তবে ৬৪ জেলার ধানের পরিচিতি বা বিবরণ তুলে ধরতে পারলে পরিপূর্ণতা পেতো।
সব মিলিয়ে অনবদ্য একটি সংখ্যা উপহার দিয়েছেন মাহমুদ নোমান। কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমলব্ধ। এ ক্ষেত্রে কবি-লেখকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কবি-লেখকরা এগিয়ে না এলে এমন উদ্যোগ সার্থক করা মোটেই সহজ নয়। এমনিতেই দেশের বাজারে ছোটকাগজ বের করার উদ্যোগ নেওয়া এখনো অনেকটা ঝুঁকির ব্যাপার। মাহমুদ নোমান সেই ঝুঁকি এবং শঙ্কা উৎরে যেতে পেরেছেন। তার পরিশ্রমলব্ধ ‘প্রিয় ধান’ এখন পাঠকের হাতে হাতে। এটাই তার পরিশ্রমের সফলতা।
মাহমুদ নোমান হয়তো লেগে পড়েছেন পরবর্তী কোনো প্রিয় সংখ্যা সম্পাদনার কাজে। কারণ কবিরা বসে থাকতে পারেন না। কাজের পর কাজ তাদের মাথার মধ্যে কিলবিল করতে থাকে। পরবর্তী যাত্রায় হয়তো তিনি আরও সফল হবেন। সবার সহযোগিতায় আরও গুছিয়ে কাজ করতে পারবেন। তাই ৩০০ টাকা মূল্যের একটি সংখ্যা সংগ্রহ করে তার পাশে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
Advertisement
এসইউ/এমএস