মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের উপ-পরিচালক থেকে উপ-পরিদর্শক পর্যায়ের ৫৭৯ জন কর্মকর্তা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। তাদের ৯ মি.মি. সেমি অটোমেটিক পিস্তল টি-৫৪ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০২৪’ জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে এ নীতিমালা জারি করা হয়।
Advertisement
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করে। অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জনবল নিয়মিত মাদক উদ্ধার অভিযান, মাদক চোরাকারবারিদের গ্রেফতার, মামলা তদন্ত ও পরিচালনার কাজে নিয়োজিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে এবং অভিযানকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়, অধিদপ্তরের বর্তমান মোট জনবল ৩ হাজার ৫৯ জন। এর মধ্যে মহাপরিচালক একজন, পরিচালক চারজন, অতিরিক্ত পরিচালক নয় জন, উপ-পরিচালক ৯০ জন, সহকারী পরিচালক ৯৩ জন, পরিদর্শক ১৮৬ জন, উপ-পরিদর্শক ২১০ জন, সহকারী উপ-পরিদর্শক ২৮৫ জন এবং ৯২৮ জন সিপাইসহ মোট এক হাজার ৮০৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী মাদক অপরাধ দমন কাজে জড়িত। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে উপ-পরিচালক ৯০ জন, সহকারী পরিচালক ৯৩ জন, পরিদর্শক ১৮৬ জন, উপ-পরিদর্শক ২১০ জনসহ মোট ৫৭৯ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য (প্রাধিকার অনুযায়ী) অস্ত্র সংগ্রহ করা আবশ্যক।
এ ৫৭৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৯ মি.মি. সেমি অটোমেটিক পিস্তল টি-৫৪ দেওয়া হবে। প্রস্তাবিত ক্ষুদ্রাস্ত্রগুলো মোটামুটি আধুনিক, মূল্য তুলনামূলক কম এবং প্রস্তাবিত অস্ত্র পুলিশ, আনসার, অন্যান্য বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্দেশ্য সাধনের দিকে দৃষ্টি রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
Advertisement
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিলের জারি করা ক্ষুদ্রাস্ত্র নীতিমালা অনুযায়ী অধিদপ্তরের চাহিদানুযায়ী অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।
অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য কাছাকাছি জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি রুম বা জেলা পুলিশ লাইনস বা থানা ব্যবহার করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রধান কার্যালয়সহ অধিদপ্তরের নিজস্ব সব অফিস ভবনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত জনবল নিশ্চিত করে নিজস্ব আলমারি বা অস্ত্রাগার নির্মাণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন
Advertisement
সেনাবাহিনী বা বিজিবি বা আনসার বা পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ একাডেমিতে অধিদপ্তরের প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্ত্র চালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্য থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করে অধিদপ্তরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
কোন পরিস্থিতিতে গুলি করা যাবেনীতিমালায় বলা হয়, মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা, আসামি গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার, আত্মরক্ষা এবং সরকারি সম্পত্তি যেমন-অস্ত্রসস্ত্র, গোলাবারুদ, স্থাপনা, যানবাহন উদ্ধার, উদ্ধারকৃত আলামত, আসামি, জব্দকৃত আলামত, সম্পদ প্রভৃতি রক্ষা করার আইনানুগ অধিকার রক্ষায় শক্তি প্রয়োগ তথা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। তবে যে কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা যাবে না এবং ঘটনার পর যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্যভাবে বল প্রয়োগ বা গুলিবর্ষণের প্রমাণ দেখাতে হবে।
এ নীতিমালা পুলিশ, আনসার, বিজিবি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেলায় প্রয়োগ হয়ে থাকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (পরিদর্শকের নিচে নন) গুলিবর্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এবং আদেশ দিবেন।
গুলি ছোড়ার আগে মানতে হবে যে নির্দেশনাহঠাৎ করে কোনো কারণে গুলিবর্ষণের প্রয়োজন হলে, কর্তব্য পালন স্থানের পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভবনা থাকলে টিম লিডার তা শিগগির অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাকে জানাবেন এবং সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/পুলিশ সুপার/উপজেলা নির্বাহী অফিসার/নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ঘটনার স্থান, দূরত্ব, এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস্তবতার আলোকে সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বা মেট্রো বা জেলা বা বিভাগীয় গোয়েন্দা বা বিশেষ জোন কার্যালয়ের কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক বা উপপরিচালক বা অতিরিক্ত পরিচালক) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই স্থানে যাবেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন।
উত্তেজনা প্রশমন বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভব হলে গুলিবর্ষণের আগে প্রথমে উত্তেজিত জনতাকে হ্যান্ড মাইকে বা অন্য কোনো মাধ্যমে অনুরোধ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব গুলিবর্ষণকে পরিহার করে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করতে হবে।
গুলিবর্ষণের আদেশ দেওয়ার আগে যতদূর সম্ভব বল প্রয়োগ যেমন- লাঠিচার্জ ও অস্ত্রের বাট দ্বারা আঘাতের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা নিতে হবে।
একমাত্র সর্বশেষ পন্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গুলিবর্ষণের আদেশ দিতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে আদেশ দাতাকে অধিদপ্তর বা নির্বাহী তদন্তে গুলিবর্ষণের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গুলিবর্ষণ করার সময়ে পালনীয় নির্দেশাবলিনীতিমালায় বলা হয়, প্রথমেই আকাশের দিকে তাক করে ন্যূনতম সংখ্যক ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে হবে এবং ঘোষণা দিতে হবে যে এরপর সরাসরি তাক করে গুলিবর্ষণ করা হবে। যতদূর সম্ভব ন্যূনতম বল প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১ থেকে ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলে এর বেশি রাউন্ড ফায়ার করা যাবে না।
ন্যূনতম সংখ্যক ফাঁকা গুলিবর্ষণের মাধ্যমে সতর্ক করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে পরবর্তী সময়ে এক রাউন্ড করে যে কোনো একজন মাদক কারবারিকে টার্গেট করে কোমরের নিচে অর্থাৎ হাঁটু বা পায়ে গুলি করতে হবে। এই ক্ষেত্রে মাদক কারবারি বা মাদক কারবারে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের নেতা বা অবৈধ হাতিয়ার বহনকারী এমন লোককেই নিশানা করতে হবে।
যে কোনও একজনের দিকে তাক করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে ছোড়া গুলি যেন কোনও ক্রমেই পেছনে অন্য কাউকে আঘাত না করতে পারে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বা আবাসিক এলাকায় বা সমবেত উচ্ছৃঙ্খল জনতার ওপর গুলিবর্ষণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, ছোড়া গুলি যেন অন্য কোনও নিরপরাধ জনগণকে আঘাত করতে না পারে বা একটি গুলি একসঙ্গে একের বেশি ব্যক্তিকে আঘাত না করতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যে গুলিবর্ষণ করা হলে বুলেট কমপক্ষে ২ হাজার গজ পর্যন্ত কার্যোপযোগী থাকে এবং এই দূরত্বের মধ্যে কাউকে আঘাত করলে তার প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
গুলিবর্ষণের সময় আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন ছোড়া গুলি যে কোনও কঠিন দ্রব্যে আঘাত করে দিকভ্রষ্ট হয়ে অন্য কোনও জনগণের প্রাণহানির কারণ না হয়।
প্রথমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট একজন সদস্যের নাম উল্লেখ করে গুলির সংখ্যা উল্লেখ করে গুলিবর্ষণের আদেশ দিতে হবে। প্রথমে একই সঙ্গে সবাইকে একত্রে গুলি করার আদেশ দেওয়া যাবে না। তবে পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে একের বেশি সংখ্যক সদস্যকে নির্দিষ্ট করে এক রাউন্ড করে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে।
গুলিবর্ষণের পর গুলির খোসা অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে। ন্যূনতম গুলিবর্ষণ করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসিলে গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় বা অহেতুক ভীত হইয়া এলোপাতাড়ি গুলি না করে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তা নিশ্চিত করবেন।
গুলিবর্ষণের পর করণীয়গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটলে তা তাৎক্ষণিকভাবে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বা মেট্রো বা জেলা বা বিভাগীয় গোয়েন্দা বা বিশেষ জোন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা মহাপরিচালককে জানাতে হবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বা মেট্রো বা জেলা বা বিভাগীয় গোয়েন্দা বা বিশেষ জোন কর্মকর্তা সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত জানবেন। পরিচালক (অপারেশনস্ ও গোয়েন্দা)-কে টেলিফোনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জানাবেন। তিনি মহাপরিচালককে জানাবেন।
অভিযানকারী দলের টিম লিডার যত দ্রুত সম্ভব মরদেহগুলোকে (যদি থাকে) পুলিশ না আসা পর্যন্ত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠাবেন। তিনি ছোড়া গুলির খোসা সংগ্রহ করে ইস্যু করা রাউন্ড সংখ্যার সাথে মিলিয়া দেখবেন।
তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ও সঠিক প্রতিবেদন (দেওয়া ছক অনুযায়ী) তৈরি করবেন যার মধ্যে ব্যবহৃত গুলির রাউন্ড সংখ্যাসহ ঘটনার একটি নির্ভুল বিবরণ থাকবে এবং নিজ হেফাজতে সংরক্ষণ করবেন। এ প্রতিবেদনটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর শিগগির পাঠাবেন এবং এর অনুলিপিও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকেও দেবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, প্রতি ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণের ঘটনার পর শিগগির সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার বা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে হবে। অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বা মেট্রো বা জেলা বা বিভাগীয় গোয়েন্দা বা বিশেষ জোন কর্মকর্তা বিষয়টি তদারকি করবেন। এ ক্ষেত্রে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী বা টিম লিডার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এজাহারকারী হিসেবে অভিযোগ দায়ের করবেন। প্রয়োজনে অভিযানকারী দলের অন্য সদস্যরা সাক্ষী হিসেবে থাকতে পারবেন।
গুলিবর্ষণের পর তদন্তনীতিমালায় বলা হয়, গুলিবর্ষণের পর তা যুক্তিযুক্ত হয়েছে কি না বা সরকারি বিধির বিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কি না তা নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনে যথাসম্ভব বিভাগীয় এবং নির্বাহী তদন্ত করা যাবে।
বিভাগীয় তদন্তের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক গুলিবর্ষণকারীর টিম লিডারের চেয়ে জ্যেষ্ঠ কোনও কর্মকর্তার মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পিআরবির (বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধান) প্রবিধান-১৫৭ মোতাবেক পরিচালিত নির্বাহী তদন্ত থেকে বিভাগীয় তদন্ত হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন।
আরএমএম/এমআইএইচএস