স্বাস্থ্য

‘এক বেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে’

‘এক বেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে’

টিনের একটা মাত্র চালা ঘর। বাড়ির উঠানে লাউ-শিমের মাচা। বাড়ির চারপাশটা হাওরের বিরাণভূমি। এক বছর ধরে এই বাড়িতে বসবাস করছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের গ্রামপুলিশ আম্বির খানের পরিবার।

Advertisement

গত মার্চ মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আম্বির খান। তার মৃত্যুর পর অথৈ জলে পড়েছে পুরো পরিবার। তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তার স্ত্রী রিকা বেগম।

পরিবার ও গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আম্বির খান ভাটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে গ্রামপুলিশের চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত মার্চ মাসে হঠাৎ তার প্রচণ্ড জ্বর ওঠে। এরপর তাকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, আম্বির খানের ডেঙ্গু হয়েছে। মাসখানেক চিকিৎসার পরও কোনো উন্নতি হয়নি আম্বির খানের। পরে চলতি বছরের ২ মে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।

‘গ্রামপুলিশ আম্বির খান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে আমি অনুরোধ জানাবো দেশের সরকার ও বিত্তবান মানুষরা যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।’- ভাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ম. বদরুল ইসলাম

Advertisement

আম্বির খানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী-সন্তানের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে শোকে কাতর তারা।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু সংক্রমণের মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি পুরুষ, মৃত্যু বেশি নারীর ডেঙ্গু টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় বড় বাধা ‘অর্থ সংকট’

ভাটিপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, হাওরের মধ্যে উঁচু করে মাটি ফেলে টিন দিয়ে নতুন ঘর তুলেছিলেন আম্বির খান। তবে নতুন ঘরে বেশি দিন থাকতে পারেননি তিনি।

আম্বির খানের স্ত্রী রিকা বেগম বলেন, তার দুই ছেলে লতিফ ও ফারুক সিলেটে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছেন। কিন্তু এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

রিকা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামী যখন জীবিত ছিলেন তখন সংসারে কোনো কিছুর অভাব ছিল না। দুই ছেলেকে কখনও কষ্টের কাজ করতে দেননি। কিন্তু পেটের দায়ে তারা সিলেটে চাকরি করছে। তাদের খরচের টাকা রেখে যে টাকা আমাদের পাঠায় সে টাকা দিয়ে সংসার চলে না। এখন একবেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।’

Advertisement

‘পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা অসহায় মানুষকে সাহায্য করে। অনেক এনজিও আছে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আবার দেশের সরকারও আছে। কিন্তু সরকারের কেউ খোঁজ রাখে না।’- গ্রামপুলিশ আম্বির খানের স্ত্রী

রিকা বেগম আরও বলেন, ‘আম্বির খানের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে আমাদের। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা অসহায় মানুষকে সাহায্য করে। অনেক এনজিও আছে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আবার দেশের সরকারও আছে। কেউ যদি আমাদের গরু-ছাগল কিনে দিতো তাহলে সেগুলো লালনপালন করে হয়তো আমরা কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারতাম। কিন্তু সরকারের কেউ খোঁজ রাখে না।’

আরও পড়ুন: সাধারণ উপসর্গের ডেঙ্গু রোগী বেশি, সুস্থ করা যাচ্ছে সহজে ডেঙ্গু কেড়ে নিলো গ্রাম পুলিশের প্রাণ ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশের চাকরি জাতীয়করণে হাইকোর্টের রায় স্থগিত

ভাটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য পিয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্রামপুলিশ আম্বির খান মারা যাওয়ার পর তার পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরাও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। আমি অনুরোধ করবো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করার জন্য।’

ভাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ম. বদরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামপুলিশ আম্বির খান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে আমি অনুরোধ জানাবো দেশের সরকার ও বিত্তবান মানুষরা যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।’

এলএএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/এএসএম