সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তর-পশ্চিমের ইদলিবে তাদের ঘাঁটি থেকে সরকারবিরোধী বিস্ময়কর অভিযান শুরুর পর পতন ঘটে বাশার আল-আসাদের। এর মাধ্যমে বহু বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল একেবারেই অচিন্তনীয়।
Advertisement
এটাই সিরিয়ার জন্য টার্নিং পয়েন্ট। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় এসেছিলেন আসাদ। একনাগাড়ে দেশ শাসন করেছেন দুই যুগ। বাবার মতোই শক্ত হাতে দেশ পরিচালনা করেছেন তিনি।
উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং দমনপীড়নমূলক রাজনৈতিক কাঠামো পেয়েছেন যেখানে বিরোধীদের প্রতি কোনো ধরনের সহনশীলতা ছিল না।
প্রথম দিকে একটি প্রত্যাশা ছিল যে, তিনি হয়তো আরও ভিন্ন, আরও খোলামেলা, তুলনামূলক কম নিষ্ঠুর হবেন। কিন্তু সেগুলো বেশিদিন টেকেনি।
Advertisement
২০১১ সালে তার সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন নৃশংসভাবে দমনের জন্য তাকে সবসময়ই মনে রাখা হবে। ওই ঘটনাই সিরিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। এই যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও অধিক মানুষ মারা যায় এবং শরণার্থীতে পরিণত হয় আরও অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।
রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতা নিয়ে তিনি বিদ্রোহীদের দমন করে নিজেকে রক্ষা করেছেন। সিরিয়ায় রাশিয়া বিমানশক্তি ব্যবহার করেছে আর ইরান তার সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে।
পাশাপাশি ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠন তাদের প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের মোতায়েন করেছিল। কিন্তু এর কিছুই এবার ঘটেনি। তার সহযোগীরা নিজেদের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। তারা আসাদকে কার্যত পরিত্যাগ করেছে।
অথচ তার সেনারা এদের সহযোগিতা ছাড়া অক্ষম। কিছু ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের থামাতে তারা ছিল অনিচ্ছুক। এই বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।
Advertisement
গত সপ্তাহে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই প্রথমে তারা আলেপ্পো দখল করে। এটি সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এরপর তার কয়েকদিন পরেই হামা, হোমস শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলে নেয় তারা।
অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকেও এগিয়ে আসছিল বিদ্রোহীরা। ফলে অভিযানের এক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দামেস্ক। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্রোহী যোদ্ধারা রাজধানীতে প্রবেশ করে, যা ছিল আসাদের ক্ষমতার কেন্দ্র।
তবে আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যকে বদলে দিতে যাচ্ছে। সিরিয়ায় এই পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বড় ধরনের ধাক্কা খেল। আসাদের অধীনে সিরিয়া ছিল ইরানিদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোগাযোগের অংশ। হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর জন্য এটা ছিলো মূল পথ।
হিজবুল্লাহ নিজেই ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে মারাত্মক দুর্বল হয়ে গেছে এবং এর ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইরান সমর্থিত আরেকটি গোষ্ঠী হলো ইয়েমেনের হুথিরা। তারা বারবার বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে ইরাকের মিলিশিয়া এবং গাজার হামাস সব মিলিয়েই তেহরানের ভাষায় প্রতিরোধের অক্ষ- যা বর্তমানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এখন ওই অঞ্চলের নতুন চিত্র নিয়ে ইসরায়েলে উদযাপন হবে, যেখানে ইরানকে দেখা হবে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে।
অনেকে বিশ্বাস করেন বিদ্রোহীদের এবারের অভিযান তুরস্কের আশীর্বাদ ছাড়া হয়নি। তারা অবশ্য সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহীদের সমর্থন দিলেও এইচটিএসকে সমর্থনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
কিছু সময়ের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ান কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার চাপ দিয়েছেন যেন সিরিয়ার শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরতে পারে।
আরও পড়ুন: দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার আল-আসাদ সিরিয়ায় আইএসের ৭৫ ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা বাশার আল-আসাদের বাবার ভাস্কর্য ভেঙে ফেললো বিদ্রোহীরাতুরস্কে কমপক্ষে ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছে। এটা স্থানীয়ভাবে এখন স্পর্শকাতর ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বাশার আল-আসাদ তা করতে রাজি হচ্ছিলেন না। ফলে এখন আসাদের বিদায়ে অনেকেই খুশী। কিন্তু এরপর কী হবে?
টিটিএন