জাতীয়

তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় নাসির উদ্দীন কমিশন

তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় নাসির উদ্দীন কমিশন

তরুণদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে চায় নাসির উদ্দীন নির্বাচন কমিশন। এজন্য পুরোনো ভোটার তালিকায় নির্বাচন না করে যোগ্য নাগরিকদের তফসিল ঘোষণার আগ মুহুর্তেও ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপর প্রথম কমিশন বৈঠকে বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়। একই সঙ্গে তরুণদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সবাই একমত হন। এজন্য পুরোনো তালিকা নয় বরং তফসিলের আগ পর্যন্ত যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন তাদেরও তালিকার যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতি বছর আইনে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। আর সেই সময়ের যত পরেই নির্বাচন হোক না কেন, পুরোনো সে তালিকা দিয়েই করা হয় ভোটের আয়োজন। এতে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

আরও পড়ুন ভোটার কার্যক্রম প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানলো নাসির উদ্দীন কমিশন  দুই মাসের মধ্যে ভোটার তালিকার খসড়া চূড়ান্ত: ইসি  নির্বাচন কমিশনে নতুন ৪ কমিটি গঠন 

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচন সাধারণত ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে হয়ে থাকে। তফসিল হয় তার প্রায় দেড় মাস আগে। আর ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয় প্রতিবছর ২ মার্চ। এতে প্রায় অন্তত নয় থেকে সাত মাস ধরে যারা ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেন, তারা তালিকার বাইরে থেকে যান। এতে বিরাট সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেন না।

Advertisement

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনের আগে হালনাগাদ হয় ২০২৩ সালের ২ মার্চ। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বাদ পড়াদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একটি সুযোগ দিয়েছিল সে সময়কার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই কমিশন সে বছর ১৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল দিয়েছিল।

কর্মকর্তারা বলছেন, ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক নির্দেশনায় ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাদ পড়া ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল আউয়াল কমিশন। সে সময় বলা হয়েছিল, যারা ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেছেন, তারাই কেবল ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এতে দুই লাখ ভোটার যোগ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে বাদ পড়েছিলেন ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ বছর পূর্ণকারীরা।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটার হয়েছিলেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নিয়েই করা হয়েছিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ জন আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন। হিজড়া ভোটার ছিল ৮৪৮ জন।

অন্যদিকে, নির্বাচনের দুমাস পর, ২০২৪ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত হালনাগাদ শেষে ভোটার দাঁড়ায় ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এ ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়। এই হিসেবে এক বছরে ভোটার বাড়ে ২৫ লাখ ১৭ হাজার তিনজন। অর্থাৎ বিরাট সংখ্যক ভোটার নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

Advertisement

এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, যখনই একটা নির্বাচন আসবে, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে হোক বা যেভাবেই হোক, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, সে বিষয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শতভাগ শুদ্ধতার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুসের চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ভোটার তালিকায় যোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত না করাটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এটা একটা ভালো উদ্যোগ, যা আরো আগে থেকেই নেওয়া উচিত ছিল। এটা হলে তরুণ ভোটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ভোটের হারও বাড়বে। তাই নতুন কমিশন যেন তার নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে না আসে।

ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরকিরা ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করলেই ভোটার হতে পারেন। এ জন্য বছরের যে কোনো সময়ই ভোটার হওয়া যায়। তবে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে প্রতি বছর ২ মার্চ। তার আগে ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি ও আপত্তি গ্রহণ করে। সেগুলো নিষ্পত্তির পরই প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। আর এই তালিকার ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

এমওএস/এসএনআর/জিকেএস