আন্তর্জাতিক

মাহাথির মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তের অনুমোদন

সিঙ্গাপুর প্রণালীর কাছে দুটি বিতর্কিত দ্বীপের দাবি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির রয়্যাল কমিশন অব ইনকোয়ারি (আরসিআই)।

Advertisement

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দিয়েছিল যে, বাতু পুতেহ (পেড্রা ব্র্যাঙ্কা) সিঙ্গাপুরের অন্তর্ভুক্ত, আর মিডল রকস মালয়েশিয়ার অন্তর্ভূক্ত এবং দক্ষিণ প্রান্তের সমুদ্রসীমার মালিকানা চিহ্নিত হওয়ার পর নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয়। তবে ২০১৭ সালে তৎকালীন মালয়েশিয়ান সরকার বাতু পুতেহর সার্বভৌমত্ব নিয়ে আইসিজের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও ২০১৮ সালে ড. মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই আবেদন প্রত্যাহার করে।

দেশটির বারনামা, দ্য ষ্টার, মালয় মেইল, নিউ স্ট্রেইটস টাইমসসহ প্রায় সবগুলো স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার সংসদে উত্থাপিত ২৭১ পৃষ্ঠার প্রকাশিত রিপোর্টে যে আইনি সুপারিশগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে, ড. মাহাথিরের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪১৫(বি) ধারা অনুযায়ী অপরাধের জন্য তদন্ত শুরু করা যেতে পারে এবং এর শাস্তি ৪১৭ ও ৪১৮ ধারার আওতায় হতে পারে।

তবে কমিশনের সচিবের মাধ্যমে একটি পুলিশ রিপোর্ট দায়ের করার প্রস্তাব করা হয়েছে যেন দ্রুত তদন্ত শুরু করা যায়।

Advertisement

চলতি বছরের ২৯ আগস্ট আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী দাতুক সেরি আজালিনা ওসমান পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, এই রিপোর্ট মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর উত্থাপন করা হবে। তুন মোহাম্মদ রউস শরীফের নেতৃত্বে গঠিত আরসিআই মালয়েশিয়ার বাতু পুতেহ, মিডল রকস এবং দক্ষিণ প্রান্তের সার্বভৌমত্ব নিয়ে পরিচালিত বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করার দায়িত্ব ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিমের সম্মতিতে আরসিআই গঠন করা হয়।

জানা গেছে, ড. মাহাথির মোহাম্মদকে বাতু পুতেহ ইস্যুতে তদন্তের সুপারিশ করার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন দেশটির মন্ত্রিসভা বা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্পূর্ণ সমর্থন ছাড়াই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

আরসিআইর মতে, এই সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে বড় একটি ত্রুটি ছিল যা দেশের স্বার্থের পরিপন্থি। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে মালয়েশিয়া বাতু পুতেহ ফিরে পাওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। কমিশন আরও জানিয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তের পেছনের উদ্দেশ্য এবং প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে ড. মাহাথিরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করা যেতে পারে। তাদের মতে, এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মন্ত্রিসভা বা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্পূর্ণ সমর্থন ছাড়া করা উচিত ছিল না।

এছাড়াও আরসিআই আরও বলছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং এটি ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

Advertisement

আরও পড়ুন: মুসলিমদের স্বার্থে আর্থিক ক্ষতিকে ভয় পায় না মাহাথির মোহাম্মদ হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

এদিকে আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি মাহাথির মোহম্মদ দুই দফায় দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর সফলভাবে দেশটির নেতৃত্ব দিয়ে মালয়েশিয়াকে করেছেন আধুনিক ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র। তবুও তার বিরুদ্ধে আনা এমন ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করার পর দুই দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

টিটিএন