চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৭ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
Advertisement
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
জাতীয় রপ্তানিতে একক বৃহত্তম অবদানকারী তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। তবে সামগ্রিক রপ্তানির তুলনায়, তৈরি পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম, যা ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এটি একটি ইঙ্গিত দেয় যে নন-আরএমজি খাত থেকে ভালো রপ্তানি আয় এসেছে এবং এটি ভারসাম্যের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ।
Advertisement
আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট ব্যাকলগ নভেম্বরে কম হওয়ায় রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। অন্যদিকে ক্রিসমাস, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র চাহিদা মেটাতে পণ্য পাঠানোর ভিড় বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
এর পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি, যা রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আরেকটি কারণ, যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে ০.৪৯ শতাংশ শতভাগ দেশীয় উপকরণের সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না চামড়া শিল্প কেন কমছে পোশাক রপ্তানি? অশুল্ক বাধা দূর করতে পদক্ষেপ চান ব্যবসায়ীরা রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয়‘আমরা কেবল রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো নির্মাতারা কি মার্জিন পাচ্ছেন?’ প্রশ্ন করে বাংলাদেশ নিট পোশাক রপ্তানি ও প্রস্তুতকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে এহসান শামীম জানান, বিমানে পণ্য পাঠাতে তাদের বেশি মূল্য দিতে হয়েছিল এবং সময়সীমা মিস করার জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
‘সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায়, তারা ভিন্নভাবে চিন্তা করবে এবং আদেশ স্থানান্তর করতে পারে’ বলে যোগ করেন ফজলে এহসান শামীম।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আপনার পরিষ্কার ধারণা নেই যে বিশ্বের বাকি অংশ বিশেষ করে পোশাক ক্রেতারা কীভাবে আমাদের সঙ্গে রাজার আচরণ করছে। দেশ কে চালাচ্ছেন তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা সুলভ মূল্যে সময়মতো ডেলিভারি চান।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পোশাক রপ্তানিকারক বলেন, ‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি, যা বায়ারদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত শর্ত।’
তিনি যোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের একমাত্র দাবি হলো কারখানাগুলো চালানোর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সরকারকেও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
রপ্তানি আয়ের চিত্র২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মাসে হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছ থেকে রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে ১৯৮ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৭৭ মিলিয়ন।
পাট ও পাটজাত পণ্যে ১০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং আয় হয়েছে ৩৪২ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছর ছিল ৩৮০ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে ১৩২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের ৯৭ মিলিয়নের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৯৩ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন
তৈরি পোশাক রপ্তানি ভালো করছে নতুন বাজারে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে তুরুপের তাস ‘বিনিয়োগ আকর্ষণ’ রপ্তানি আয় কমতে পারে ৪.৩৬ শতাংশ জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২.৮৮ শতাংশ শ্রমিক অসন্তোষ-ভাঙচুর, হুমকিতে উৎপাদনমুখী শিল্প ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানিতে হোঁচটচামড়ার জুতা রপ্তানি ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৮২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ২২৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু চামড়াজাত পণ্যে 8 শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। গত বছরের ১৪৬ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে এ খাত আয় করেছে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার।
কৃত্রিম চামড়ার পাদুকা থেকে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং ৪০ দশমিক ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদীয়মান খাত আয় করেছে ২১৮ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫৫ মিলিয়ন ডলার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ৪৬৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর ছিল ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার।
হোম টেক্সটাইল খাতে ৫ শতাংশ বেড়ে ৩২৭ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩১১ মিলিয়ন ডলার। ক্যাপ রপ্তানি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছে। এই খাত থেকে আয় দাঁড়িয়েছে মিলিয়ন।
কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৯৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
আইএইচও/এমএমএআর/জেআইএম