ফিচার

আমরাই বুঝি সবচেয়ে ভাগ্যবতী

দেশের অসংখ্য ছেলে-মেয়ে যখন পড়ালেখা শেষ করে চাকরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। সেখানে চাকরি আমাদের সামনে এসে কড়া নাড়ছে। কোর্স সম্পন্ন করেই আমরা এক হাতে সনদপত্র নিচ্ছি। আরেক হাতে নিচ্ছি চাকরির যোগদানপত্র। এটাকে সৌভাগ্য ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না। সেদিক থেকে আমরাই বুঝি সবচেয়ে ভাগ্যবতী। দেশের প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি এভাবেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে একদিন হয়তো আমাদের বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে।বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের কার্যালয়ে এসে এভাবেই মনের কথাগুলো বলছিলেন, রোজিনা আক্তার, রিপা আক্তার ও সোনিয়া। আজ থেকে তারা দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল পরিবারের সদস্য।এদিন ১২০ জন কিশোরীর হাতে অ্যাসিসটেন্ট অপারেটর পদে চাকরির যোগদান পত্র তুলে দিয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তারা সবাই বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এতো কম বয়সে চাকরি পাওয়ার অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে রোজিনা এক বাক্যে বলেন, আমি ভাগ্যবতী। কারণ আমি আমার নিজ এলাকা গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দেখেছি অনেক বড় ভাই ও বোন পড়ালেখা শেষ করে এখনো ঘুরছে চাকরির পেছনে। অথচ আমি ২০১৪ সালে এসএসসি সম্পন্ন করে বিটাকের ইলেকট্রিক বিভাগ থেকে ৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করেই সনদপত্রের সঙ্গে সঙ্গে চাকরিতে যোগদানের কাগজ হাতে পেলাম। অথচ কিছুদিন আগে আমি নিজেই চাকরিকে সোনার হরিণ ভাবতাম।রোজিনা জানায়, আমার বাবা ব্যবসা করে। আমরা ৭ ভাই-বোন। এর মধ্যে আমি চতুর্থ। বাবার ব্যবসার টাকা দিয়ে সংসার চলা খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন আমি কিছুটা হলেও পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারবো। আমার চাকরি হয়েছে জেনে আমার পরিবারের সবাই অনেক খুশি। অথচ পরিবারের বাকি সদস্যদের চাকরি নিয়ে এখনো চিন্তিত আমার বাবা-মা। রোজিনা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।বিটাকে ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অ্যাসিসটেন্ট অপারেটর পদে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে যোগ দিয়েছেন আরেক কিশোরী রিপা আক্তার। তার বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে। রিপা ২০১৩ সালে এলাকার একটি স্কুল থেকে এসএসসি শেষ করেছে। এরপর একই এলাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে এখন অনার্সে পড়ছেন। এরমধ্যে তিনি বিটাকের ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে ৩ মাস মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করেছেন।রিপা জানালো, কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে যেকোনো সময় জীবন সংগ্রামে জড়াতে প্রস্তুত রাখতে হবে। কারণ পড়ালেখা শেষ করেই যে চাকরি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, এমনটি কিন্তু না। তাই পড়ালেখার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে উর্পাজনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।একই কথা জানালেন সোনিয়া আক্তার। তিনিও যোগদান করেছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে। তিনি বিটাকের প্লাস্টিক ও জেনারেটর বিভাগ থেকে ৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করেছেন।সোনিয়া জানালেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সব বয়সী মানুষকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি রাখা উচিত। আমাদের দেশে এখন চাকরি সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। এজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জনের রাস্তা বের করে রাখা উচিত। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিত। এ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কোনো মানুষ বেকার থাকবে না। বরং তিনিই একজন ভালোমানের উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারবেন। সর্বোপরি তারা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরিতে দেশের অন্যসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।এ ব্যাপারে আরএফএল-এর রিক্রুটমেন্ট অফিসার মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বছরে কয়েক দফায় বিটাক থেকে ছাত্র-ছাত্রী রিক্রুটমেন্ট করে থাকি। আজও (বৃহস্পতিবার) ১২০ জন কিশোরীকে নিয়োগ দিয়েছি। তারা আজ এক হাতে সেখানকার প্রশিক্ষণের সনদ পেয়েছে অন্য হাতে চাকরিতে যোগদানপত্র পেয়েছে।তিনি বলেন, এই ১২০ জন কিশোরী বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৩ মাসের কোর্স সম্পন্ন করেছে। আমরা আগামীকাল শুক্রবার তাদের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নরসিংদীর পলাশ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের কারখানায় নিয়ে যাবো। সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে তাদের যোগদান করানো হবে।তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে সকল সুযোগ সুবিধা তারা পাবে। এছাড়া মাত্র ২ টাকায় তারা দুপুরের খাবার খেতে পারবে। সেখানে তাদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।এমএএস/এসএইচএস/এবিএস

Advertisement