বর্ষার পানি দেরিতে আসায় ও বন্যা না হওয়ায় পাবনায় ভালো হয়েছে আমন ধানের ফলন। এতে কৃষকের গোলার আকার বদলেছে। তবে দাম বিবেচনায় বদলায়নি ভাগ্য। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও গতবছরের সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে আমন ধান। তবে এরমধ্যেও ভালো ফলনে কিছুটা স্বস্তির হাসি চাষিদের মুখে।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো পাবনার মাঠে মাঠে আমন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। তবে অধিকাংশ জমি থেকে ধান তুলে নিয়েছেন চাষিরা। টানা খরা অতিবৃষ্টিসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সোনালি ফসল ঘরে তুলতে এখনো ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেক চাষি। কেউ ঘোড়ার গাড়ি আবার কেউবা মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন ধান। কোনো কোনো মাঠে দেখা যাচ্ছে ধান মাড়াইয়ের ব্যস্ততা। এবার ধান চাষের উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম না বাড়ায় আক্ষেপ থাকলেও ফলন ভালো হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চাষিরা। এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় রোপা ১৫-১৮ ও বোনা আমনে ৫-৭ মণ গড় ফলন হচ্ছে।
বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। আকারে চিকন ধানগুলো বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। চাষিরা বলছেন, গতবছরও ধানের দাম এমনই ছিল।
ফরিদপুর উপজেলার পাথালিয়াহাট গ্রামের চাষি নাসির উদ্দিন জানান, ফসল আবাদের প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার বাজারে জিনিসের দাম আগুন হওয়ায় সংসারের খরচ বেড়েছে। অথচ ধানের দাম একই রয়ে গেছে। সব বদলালেও আমাদের ভাগ্য বদলায়নি।
Advertisement
সদর উপজেলার হাজিরহাটে ধান বিক্রি করতে আসা চাষি হারুন ও চাটমোহরের রেল বাজারে আসা আসাদ বলেন, ধান মাড়াইয়ে ব্যয় বেড়েছে। গতবছর প্রতি মণে আড়াই কেজি নিলেও এবার কোনো কোনো জায়গায় নিচ্ছে চার কেজি করে। বিক্রির সময় ধলতা (অতিরিক্ত) দিতে হয়। জমি লিজ বাবদ চলে যায় ১২-১৫ হাজার টাকা। এছাড়া লেবার বিলও বেড়েছে। তবে এ ধানে সার কীটনাশক কম লাগায় ও ফলন ভালো হওয়ায় কিছুটা বেঁচে গেছি। অল্প হলেও লাভের মুখ দেখা যাবে।
বেড়ার বৃশালিখা মহল্লার চাষি শহিদুল ইসলাম, চাটমোহরের রশিদ আলী ও ভাঙ্গুড়ার হোসেন মালিথা বলেন, এবার আমন মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় ছিল চাষিরা। তবে সবশেষ তেমন ক্ষতি হয়নি। দাম না বাড়লেও ভালো ফলন হওয়ায় সন্তোষ রয়েছে চাষিদের মধ্যে। খড়ের দাম ভালো পাওয়ায় এ খুশি আরও বেড়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পাবনা সদর, সাঁথিয়া ও চাটমোহর উপজেলায় রোপা এবং বেড়া, ভাঙ্গুড়াবো ফরিদপুর উপজেলায় বোনা আমনের আবাদ বেশি হয়। এ মৌসুমে পাবনায় ৫৫ হাজার ৪০০ হেক্টর রোপা ও ৩৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এরমধ্যে রোপা ৫৫ হাজার ৪১৫ ও বোনা ৩৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর আবাদ হয়েছে। এবছর রোপার ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৩৪ টন ও বোনা আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৫৯২ টন। এ মৌসুমে ব্রি-৭৮, ব্রি-৩৯, ব্রি-৪৯, স্বর্ণা এবং বিনা-৭ ও বিনা-১৭ সহ আরও কয়েকটি উন্নত জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আমন চাষে খরচ ও শ্রম উভয়ই কম। এছাড়া পোকা বা রোগবালাইয়ে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। কৃষক লাভবান হবেন।
Advertisement
আলমগীর হোসাইন/জেডএইচ/এমএস