তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নয়ন সরকার। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স করেছেন। শিক্ষাজীবনেই নয়ন হয়ে উঠেছেন ‘সমাজের অক্সিজেন’। পরিবেশ রক্ষায় নয়ন বেশ সোচ্চার। ঢাকার বিভিন্ন পার্ক-মাঠ-সড়কদ্বীপে গাছ রক্ষা, সিআরবি রক্ষা, পাহাড় রক্ষা, নদী রক্ষা, বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী রক্ষাসহ ইত্যাদি সব পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক সব আন্দোলনে দেখা যায় তাকে। এ ছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটগুলোতে নেতৃত্ব দেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় কিংবা বন্যার সময়ে ত্রাণ কার্যক্রমেও সক্রিয়। সিলেট, ফেনী ও নোয়াখালীতে উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা শেষে খাগড়াছড়িতে পুর্নবাসন কাজেও অংশগ্রহণ করেছেন নয়ন।
Advertisement
ভালো কাজের জন্য বন্ধুদের প্রশংসা কুড়ান তিনি। ছোট-বড় সব ধরনের মানবিক কাজে নয়ন থাকেন সবার আগে। তবে সেচ্ছাসেবী হিসেবেই নয়ন বেশ পরিচিত। কোথাও রক্ত লাগবে? সেখানে ছুটে যান নয়ন। শীতার্তরা শীতে কাতরাচ্ছে? সেখানেও এগিয়ে যান তিনি। পরিচ্ছন্নতা অভিযান, চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ধর্ষণবিরোধী ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে নয়ন থাকেন সবার আগে। সামনের সারিতে।
নয়ন জানান, ২০১৬ সাল থেকে সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে পথচলা শুরু তার। ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এসব কাজ করি। কোথাও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ঘরে থাকতে পারি না। কাউকে পেলে সেখানে চলে যাই। কেউ না থাকলে একাই যাওয়ার চেষ্টা করি। কখনো কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলে যাই।’
দুর্যোগকালে ও করোনাকালে ত্রাণ কার্যক্রম ও ধর্ষণবিরোধী, নিরাপদ সড়ক, গাছ-নদী রক্ষা আন্দোলনসহ একাধিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন নয়ন। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সম্মুখযোদ্ধাও ছিলেন তিনি। নয়ন জানান, গ্রামে থাকাকালীন এসএসসি পরীক্ষার পর ‘স্পন্দন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনের সঙ্গে রক্তদাতা সংগ্রহ, বস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসাসেবা, খরচ প্রদান ক্যাম্পিং ইত্যাদি ইভেন্ট-ক্যাম্পিং করার মধ্য দিয়ে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শুরু হয়। এ সময়ে জাতীয় বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপ ও সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়। এরমধ্যে অন্যতম ‘রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’।
Advertisement
আরও পড়ুন
বীজ থেকেই শুরু মানবসভ্যতা শস্যের বীজ কৃষকের অধিকারএইচএসসির পরে অর্থাৎ ২০১৮ সালে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর গ্রাম থেকে ঢাকায় ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে অংশ নিতে এসেই নয়ন আগে ‘বিডি ক্লিন’ নামক সংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ সংগঠনটির ঢাকা জেলা উত্তর টিমের লজিস্টিকস উপ-সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন। এ সময় নয়ন আরও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তিতুমীর কলেজের ভর্তির পর নয়ন ও তার বিভাগের বন্ধুরা মিলে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ক্যাম্পাস-তিতুমীর’ নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সংগঠনটি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনকি তিনি তিতুমীর কলেজ বাঁধনের কলা অনুষদের আহ্বায়কও ছিলেন।
নয়ন বলেন, ‘২০১৯ সালে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বুঝতে শুরু করি। তারপর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষায় কাজ শুরু করি। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ, গাছ, বন, পাহাড় উজাড়সহ ইত্যাদি সমস্যা দেখি। তখন আমার মনে হয়, পরিবেশ সংরক্ষণে ভয়েস রেইজ করা দরকার। পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দরকার। এরপর থেকেই এসব নিয়ে কাজ শুরু করি। পরে তিতুমীর কলেজে বৃক্ষরোপণ করে ‘সেভ ফিউচার বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনের যাত্রা শুরু করি। এ সংগঠন এখন জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২০১৯ সালের পরের বছরগুলোতে আন্তজার্তিক ও জাতীয় একাধিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে কাজ শুরু করেন নয়ন। তিনি বলেন, ‘আমি অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছি। এরমধ্যে আছে ফ্রাইডে ফর ফিউচার, ক্লাইমেট লাইভ-বাংলাদেশ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট, ভালো কাজের হোটেল ও প ফাউন্ডেশন এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র। এ ছাড়া নিজেও বেশকিছু সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছি। দেশে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনারেও অংশগ্রহণ করছি।’
Advertisement
বাংলাদেশের ফুটবল রক্ষায়ও কাজ করেন নয়ন। ২০২০ সালে ‘বয়কট সালাউদ্দিন’ আন্দোলনের মাধ্যমে তার এ যাত্রা শুরু হয়। ‘সেভ বাংলাদেশ ফুটবল’ পেজটি তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করেছিল। এই কমিউনিটি এখন বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও সম্মুখ সারিতে ছিলেন তিতুমীর কলেজের এ শিক্ষার্থী। নয়ন বলেন, ‘আন্দোলনের প্রথমদিক থেকে নিয়মিত শাহবাগে, টিএসসি, শান্তিনগর, বাড্ডা, রামপুরায় আন্দোলন করেছি। ১৮ জুলাই রাবার বুলেটও লেগেছে শরীরে। ৫ আগস্টেও চানখারপুলে পুলিশের গুলির সামনে পড়ে যাই। তবে অল্পের জন্য গুলিটা আমার পাশ দিয়ে চলে যায়।’
এসইউ/এমএস