দেশজুড়ে

প্লট বরাদ্দের ৫ বছরে উৎপাদনে মাত্র ৭ শিল্প কারখানা

প্রকল্প গ্রহণের প্রায় এক দশক পর ২০১৭ সালে কাজ শেষ হয় চট্টগ্রামের মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীর। ২ বছরের মধ্যেই ৮৮ শিল্পোদ্যোক্তার মধ্যে সব প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক। কিন্তু বরাদ্দের ৭ বছরেও উৎপাদনে যেতে পারেনি ৮১টি শিল্প ইউনিট। বর্তমানে মাত্র সাতটি প্রতিষ্ঠান এ শিল্পনগরীতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্লট বরাদ্দের তিন বছর পর ২০২০ সালে পরীক্ষামূলক ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যায়। এরপর ২০২২ সালে উৎপাদনে যায় ‘এয়াকুব অটো রাইস মিল’ নামে একটি শিল্প কারখানা। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ৭টি শিল্প কারখানা উৎপাদনে গেছে। এটি দেশের ৭৫তম বিসিক শিল্পনগরী। মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীর সবকয়টি কারখানা চালু হলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

জানা গেছে, শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হলেও আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। দুই দফা বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ৮৮টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হলেও বর্তমানে মাত্র ৭টি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। সব কারখানা চালু হলে দেশের ৭৫তম শিল্পনগরীতে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন মিরসরাই পৌরসভার পূর্ব তালবাড়িয়া রেলস্টেশন এলাকায় ২০১০-২০১১ অর্থবছর প্রকল্পের জন্য ১৫ দশমিক ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রথম অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিক। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে ২ কোটি ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে।

Advertisement

কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পর বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ৮৮টি প্লট শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি।

বিসিক সূত্রে আরও জানা গেছে, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট-২৭টি, বি-টাইপ প্লট-৩৩টি ও সি-টাইপ প্লট রয়েছে ২৭টি। প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশলী খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬টি, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে-১৯টি, ক্যামিকেল অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে ১০টি, বন ও বনজাত খাতে ৩টি, প্যাকেজিং খাতে ৮টি, সিরামিকস ও নন মেটালিক- ৩টি, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে-৪টি প্লট বরাদ্দ দেয়। এরইমধ্যে পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীকে। প্লট গ্রহীতা চাইলে এখনই বিদ্যুৎ সংযোগসহ সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

সর্বশেষ ৭টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গেছে বলে জানিয়েছে বিসিক কৃর্তপক্ষ। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এয়াকুব অটো রাইস মিল, খাজা ভান্ডার, খান এক্সেসারিজ, নাছির ক্যামিকেল, আলিফ ফুড, মেঘনা ডাল মিল ও ইনোভা টেক্সটাইল। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক কাজ করছে। তবে ইনোভা টেক্সটাইল পুরোপুরি চালু হলে কয়েকশত মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৫ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

নাছির কেমিক্যালের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৯ সালের শেষে দিকে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে সাড়ে ১১ শতাংশ জমি বরাদ্দ পাই। কারখানার নির্মাণকাজ শেষে পরীক্ষামূলক ট্রান্সফরমার রিসাইক্যালিং, গ্রিজ ও মোবিল উৎপাদন শুরু হয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে বিসিক চট্টগ্রামের উপ-ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন জানান, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই এটির চাহিদা বেশি। সম্প্রতি ৭টি কারখানা উৎপাদনে গেছে। বাকি কারখানাগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সবকয়টি কারখানা চালু হলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/এএসএম