কুড়িগ্রামে প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত পাখিদের খাবার খাওয়ান ফজলুল হক (৪৫)। মাত্র ১০ মিনিটের জন্য তার বাড়িতে বসে পাখির মেলা। প্রতিদিন সকালে কমলা, রুটি, চাল ও চানাচুর মিশ্রিত খাবার দিতে হয় পাখিদের। নানান জাত ও বর্ণের পাখির ক্ষুধা মেটাতে প্রস্তুত থাকেন ফজলুল। পাখির খাবার খাওয়ানোর এমন দৃশ্য দেখতে লোকজনও ছুটে আসে।
Advertisement
ফজলুল হক কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পলাশবাড়ি কবিরাজ পাড়া এলাকার মো. নছের আলীর ছেলে।
তখন সকাল সাড়ে ৬টা। ফজলুল হকের বাড়িতে কোনো পাখির দেখা নেই। ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে কোথা থেকে যেন হঠাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ে এসে অবস্থান নেয় বাড়ির চাল আর উঠানে। কিচিরমিচির শব্দে শুধু ফজলুল হকের ঘুম ভাঙে না, তিনি নিজেই বুঝতে পারেন সময় হয়েছে পাখিদের খাওয়ানো। ঘরে রাখা চানাচুর আর চালের মিশ্রিত খাবার হাতে নিয়ে বের হয়ে আসেন আঙিনায়। হাতের পাশে রাখা প্লাস্টিকের বয়াম থেকে পরিমাণ মতো খাবার ছিটিয়ে দেন মাটিতে। ১০ মিনিটের মধ্যে খাবার খেয়ে পাখিরা আবার উড়ে যায় অজানা গন্তব্যে। এভাবে নিয়ম করে প্রতিদিন শত শত পাখিদের খাওয়াচ্ছেন ফজলুল হক।
তিনি বলেন, বছর চারেক আগে বাড়ির বারান্দায় বসে হাতে বানানো রুটি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুটি কাক চলে আসে বারান্দায়। রুটির একটি অংশ ছুড়ে ফেলেন মাটিতে। নির্বিঘ্নে কাক দুটো খেয়ে চলে যায়। পরের দিন আমি আমার মতো করে ঘরে শুয়ে আছি। কাক দুটি আবার বারান্দায় এসে ডাক শুরু করে। পরে ঘর থেকে বের হয়ে কাক দুটিকে উড়ে যেতে সাড়া দেই। তারা উড়ে গিয়ে গাছের ডালে বসে ডাক শুরু করে দেয়। বুঝতে পারি ওদের খাবার দিতে হবে। ঘরে থাকা চাল ছিটিয়ে দিলে ওরা গাছ থেকে নেমে এসে খাবার খেতে শুরু করে। পরের দিন একইভাবে ৫-৭টি কাক উড়ে এসে খাবার খেয়ে যায়। পরে শুধু কাকই না, দোয়েল, কাঠ ঠোকরা, কয়েক জাতের সারস, বুলবুলিসহ অন্যান্য পাখিরা দলবদ্ধ হয়ে এসে খাবার খেয়ে যায়। এখন রোজ শতাধিক পাখিদের খাবার দিতে হচ্ছে। বাকিটা জীবন যেন এইভাবে পাখিদের খাওয়াতে পারি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য পাখিরা চানাচুর খেতে পছন্দ করলেও শুধুমাত্র বুলবুলির জন্য আলাদাভাবে কমলা ফল কেটে দিতে হয়।
ফজলুল হকের স্ত্রী মোছা. শারমিন হক বলেন, বছরের পর বছর পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন তিনি। খাবার দিতে একটু দেরি হলে পাখিদের শোরগোল বেড়ে যায়। দ্রুত খাবার দিলে খাওয়া শেষমাত্র পাখিগুলো কোথায় যে চলে যায় জানা নেই। প্রথম দিকে বিরক্তিকর মনে হলেও এখন ওদের প্রতি আমারও মায়া জন্মেছে। ওদের খাবার দিতে পারলে শান্তি পাই।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুর ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামে অনেক মানুষের বসবাস। পাখিরা কেন যে ফজলুল হকের বাড়ি গিয়ে তার হাতের খাবার খায় জানি না। রোজ রোজ পাখিদের খাবার খাওয়ার দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগে।
ফজলুল করিম ফারাজী/জেডএইচ/এমএস
Advertisement