ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাক্ট-চেকার এবং ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান অল্টনিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে আবারও আইনি জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ২০২২ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করে ‘তাৎক্ষণিক মুক্তির’ নির্দেশ দিলেও সম্প্রতি উত্তর প্রদেশ পুলিশ তার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ এনেছে।
Advertisement
উত্তর প্রদেশ পুলিশের দাবি, জুবায়ের ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন’ করেছেন। জামিনের অযোগ্য ধারার এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমপক্ষে সাত বছর থেকে আজীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
অভিযোগের পেছনের ঘটনাজুবায়ের গত ৩ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের দাসনা দেবী মন্দিরের পুরোহিত যতি নরসিংহনন্দের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। ভিডিওতে নরসিংহনন্দ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিবেচিত হয়।
এই পোস্টের পর দাসনা মন্দিরের সামনে বিক্ষোভ হয় এবং পাথর ছোড়ার অভিযোগে পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। সেসময় মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নরসিংহনন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হলে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। তবে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের খবর অস্বীকার করে।
Advertisement
আরও পড়ুন>>
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকায় আগুন আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলায় বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভারতকে বুঝতে হবে এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নয়: আসিফ নজরুলএর মধ্যেই নরসিংহনন্দের সমর্থকেরা স্থানীয় থানা ঘেরাও করে এবং জুবায়েরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। পরবর্তীতে নরসিংহনন্দের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিজেপি নেতা উদিত্য ত্যাগী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করলে মামলা নেয় পুলিশ।
নরসিংহনন্দ এর আগেও ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। এর জন্য ২০২২ সালে জেলও খেটেছিলেন তিনি।
আইনি জটিলতা ও প্রতিক্রিয়াজুবায়েরের আইনজীবীরা অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি মামলাটি খারিজ করার আবেদন জানিয়েছেন।
Advertisement
আর আত্মপক্ষ সমর্থনে জুবায়ের বলেছেন, কেবল তিনিই নরসিংহানন্দের মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেননি। তার আগেই অনেক সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া চ্যানেল ভিডিওটি প্রকাশ করেছিলেন।
জুবায়ের বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ তুলেছে, তারা নিজেরাই ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে, অথচ তারা মুক্ত। আমি ঘৃণামূলক অপরাধ রিপোর্ট করেছি বলে আমাকে নিশানা করা হচ্ছে।
অল্টনিউজের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বলেছেন, এটি নির্লজ্জ প্রতিহিংসা মাত্র। আসল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে যারা সত্য তুলে ধরে, তাদের দমন করা হচ্ছে।
অধিকার সংগঠনগুলোর নিন্দাজুবায়েরের বিরুদ্ধে কঠোর ধারার অভিযোগ আনার কারণে মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এটিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে আখ্যা দিয়েছে।
প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া এই পদক্ষেপকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ডিজিটাল মিডিয়া সংগঠন ডিজিপাব জুবায়েরের বিরুদ্ধে এই মামলাকে ‘প্রতিহিংসাপূর্ণ’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সূত্র: বিবিসিকেএএ/