জাতীয়

ঘুস বেশি বিচারিক সেবায়, দুর্নীতির শীর্ষে বরিশাল বিভাগ

দেশের সেবা খাতগুলোর মধ্যে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি ঘুস দিতে হয় বিচারিক সেবা পেতে। এ খাতে খানাপ্রতি গড়ে দিতে হয়েছে ৩০ হাজার ৯৭২ টাকা। এরপরই ক্রমানুসারে ভূমি, ব্যাংকিং, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সেবাগ্রহণে ঘুস লেনদেন বেশি হয়।

Advertisement

অন্যদিকে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে দুর্নীতি ও ঘুস লেনদেন সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে দুর্নীতির শিকার ৮২ শতাংশ খানা এবং ঘুসের শিকার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ খানা। সেবা নিতে গিয়ে বরিশালের পরই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও ঘুসের শিকার হয়েছে খুলনা বিভাগের খানাগুলো।

‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে ১৫ হাজার ৫১৫টি খানার ওপর জরিপ চালায় টিআইবি। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ, নারী ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গ দশমিক ১ শতাংশ। খানাপ্রধানদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ কৃষি বা মৎস্যজীবী।

Advertisement

আরও পড়ুন দুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট-বিআরটিএ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা মন্দ ঋণ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু বা ১৪টি মেট্রোরেল করা যেতো

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারিক সেবা পেতে খানাগুলোতে গড়ে ৩০ হাজার ৯৭২ টাকা ঘুস দিতে হয়। এছাড়া ভূমি সেবা পেতে ১১ হাজার ৭৭৬ টাকা, ব্যাংকিং সেবায় ৬ হাজার ৬৮১ টাকা ও বিআরটিএর সেবা পেতে খানাগুলোতে গড়ে ৬ হাজার ৬৫৪ টাকা ঘুস দিতে হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য মোতাবেক, বরিশাল বিভাগের ৮২ শতাংশ খানা জানিয়েছে তারা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। আর সেবা পেতে ঘুস দিতে হয়েছে ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারকে। একই ভাবে খুলনা বিভাগে সেবা নিতে গিয়ে ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ খানা দুর্নীতির ও ৫২ দশমিক ৭ খানা ঘুসের শিকার হয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন খানা সংশ্লিষ্টরা। এ খাতে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ খানা৷

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আদিবাসী, নারী এবং প্রতিবন্ধীসহ ব্যক্তি পর্যায়ে সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি ও ঘুসের শিকার হতে হয়েছে। যার অর্থ সীমিত আর্থ-সামাজিক সক্ষমতার ওপর অতিরিক্ত বোঝা বিদ্যমান, যা তাদের প্রান্তিকতাকে আরও বৃদ্ধি করছে।

Advertisement

জরিপে উঠে এসেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুসের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ এক লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ খানাকে ঘুস দিতে হয়েছে পাসপোর্ট সেবা পেতে।

আরও পড়ুন চট করে নির্বাচন হলে আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জন হবে না: টিআইবি

সার্বিকভাবে জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩-এ বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য- সেবাখাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনানুগভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, এক্ষেত্রে বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রযোজ্যক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার সঙ্গে সেবাদাতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হ্রাসে সব সেবা পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করতে হবে। সব খাতের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালু এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেবাদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেবাদাতার জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেশাগত মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পদোন্নতি, পদায়নের ব্যবস্থা, অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদোন্নতি, পদায়ন ও পুরস্কার দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

সংস্থাটির আরও সুপারিশ, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানোর লক্ষ্যে গণশুনানি ও সামাজিক নিরীক্ষার মতো জনগণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাগরিক সনদে সেবার মূল্য ও সেবাপ্রাপ্তির সময় সম্পর্কিত তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে এবং তা দৃষ্টিগোচর স্থানে স্থাপন করতে হবে।

এসএম/এমকেআর/এএসএম