ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সারাদেশের মানুষ। একইসঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। পরে সম্মিলিত একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে আবারও শহীদ শামসুজ্জোহা মাজার চত্বরে এসে শেষ হয় মিছিলটি। পরে বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের দূতাবাসে ভারতের উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। তারা স্পষ্ট জেনেভা সম্মেলন ভঙ্গ করেছে। মোদি সরকার যদি অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে পৃথিবীব্যাপী আমরা এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবো। এই বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসন আমরা আর চলতে দেবো না। মালদ্বীপের মতো ছোট্ট দেশ যদি ভারতকে লাথি দিয়ে বের করে দিতে পারে, সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা এই সমাবেশ থেকে ভারতের সব পণ্য সেবা বয়কট ঘোষণা করছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী মো. ফাহিম রেজা বলেন, ভারত রাষ্ট্রের কিছু মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী আমাদের দূতাবাসে হামলা করেছে, আমাদের জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে যেটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে ভারত যেভাবে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার গুজব ছাড়াচ্ছে এরও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের আন্দোলনটা অহিংস আন্দোলন। অহিংস আন্দোলনের অন্যতম একটি হাতিয়ার হচ্ছে পণ্য বয়কট, যার মাধ্যমে সে দেশের অর্থ বাণিজ্যকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়। তাই আমরা ভারতের সব ধরনের পণ্য বয়কট করছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মশাল হাতে একটি মিছিল বের করেন তারা। সেখান থেকে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বটতলায় এসেই শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শেষ করেন তারা।
এর আগে কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের স্থানে জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে অংশগ্রহণকৃত সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিলো- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চ, আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন।
সমাবেশে জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, আগরতলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালিয়েছে। আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা আপোসহীন, ঐক্যবদ্ধ৷ যত আগ্রাসী ঔপনিবেশিক শক্তি এদেশে এসেছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব আমরা দিয়েছি। আমরা ভারতকে বলে দিতে চাই, তিস্তার পানির হিস্যা বুঝিয়ে দাও, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করো, দূতাবাসে হামলার ঘটনায় ক্ষমা চাও। এক বিন্দু রক্ত থাকতেও আমরা তোমাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবো না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের পুতুল। আমাদের এই অভ্যুত্থান ছিল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। যারা ২৪ কে ৭১ এর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায় তারা ভারতের দালাল। শেখ হাসিনার মতো শক্তিশালী স্বৈরশাসককে সরাতে ৩৬ দিন সময় লাগছে। কেউ আধিপত্য দেখাতে আসলে তাদের অবস্থাও ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ইসকন নিষিদ্ধ ও ভারতের আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে ওই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের ইসকন বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসন চালালে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সেভেন সিস্টারস বিচ্ছিন্ন করে দেবো। তারা ভুলে গেছে, এই ভূমি ক্ষুদিরামের, আবু সাঈদের, মুগ্ধের এবং আবরার ফাহাদের।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয় রহমত আলী বলেন, আবু সাঈদ, মুগ্ধ আর আবরার ফাহাদ শহীদ হওয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আবরার ফাহাদের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসন থেকে যদি তারা সরে না আসে, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ তার উপযুক্ত জবাব দিবে।
কুমিল্লা
কুমিল্লায় বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় পূর্বালী চত্বরে গিয়ে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা স্পষ্ট করে ভারত সরকারকে বলতে চাই, আমরা কখনো হিন্দুবিরোধী না। কিন্তু এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলতে থাকলে আর যদি বাংলাদেশের কোনো হাইকমিশনে আঘাত করা হয়, আমরা সারা বাংলার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।
এফএ/এমএস