অর্থনীতি

মন্দ ঋণ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু বা ১৪টি মেট্রোরেল করা যেতো

বিগত সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু বা ১৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ করা যেতো বলে জানিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এছাড়া গত ১৫ বছরে অর্থনীতির সব খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। যেখানে মন্দ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল সীমাহীন।

Advertisement

দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত সরকারের ১৫ বছরের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরতে শ্বেতপত্র কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কমিটিপ্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব তথ্য তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন

Advertisement

অর্থনীতির শ্বেতপত্র পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত: ড. ইউনূস উন্নয়ন প্রকল্পের ৪০ শতাংশ অর্থ লুটপাট করেছেন আমলারা: শ্বেতপত্র

রাজধানীর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অবকাঠামো খাতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চুরি হয়েছে। প্রযুক্তি খাতেও অনেক চুরি হয়েছে, তবে ধরা কঠিন। এসব বাজার সম্পর্কে মানুষ জানে না।

কমিটির সদস্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, জ্বালানি খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার খরচের তথ্য দেখেছি। সেখানে ৩ বিলিয়ন ডলার হাত বদল হয়েছে। হাত বদলের প্রমাণ নেই, তবে প্রতি প্রকল্পে হাত বদল হয়েছে। ঠিকাদারি কাজে প্রতিযোগিতা হয়নি। যারা কাজ পেয়েছে তাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতি উচ্চ টার্গেট সেট করে লুটপাট হয়েছে।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট ছিল। আর এই প্রভাব ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও গভীর করেছে। ক্রমাগত ঋণখেলাপি ও হাই প্রোফাইল কেলেঙ্কারি আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং মূলধনকে উৎপাদনশীল খাত থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

Advertisement

হাসিনা সরকারের আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে ১৫ বছরে ২৪ হাজার কোটি ডলার পাচার

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। নামে-বেনামে ঋণ বের করা, বিদেশে অর্থপাচারসহ কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ব্যাংক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়, এখন যার চড়া মূল্য দিচ্ছে ব্যাংকসহ পুরো দেশ।

শ্বেতপত্র কমিটির তথ্য বলছে, প্রবাসে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গত ১০ বছরে ভিসার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে ১৩ দশমিক ৪ লাখ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এই টাকা ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল) নির্মাণ ব্যয়ের চার গুণ। সিন্ডিকেট এবং এই শোষণমূলক নিয়োগের কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা ন্যায্য কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে।

এমওএস/এমকেআর/এমএস