রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে চাঁদাবাজি ও জোড় করে গাছ কাটার অভিযোগে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিম ও ইউপি চেয়ারম্যান কল্লোল বসুসহ ১৪ জনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে। এতে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হয়েছে।
Advertisement
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বিপ্লব কুমার রায় মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক ডিবিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার (২৭ নভেম্বর) এ মামলাটি করেন বালিয়াকান্দির ইসলামপুর ইউনিয়নের বাড়াদী গ্রামের মৃত আফজাল মিয়ার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম মিয়া।
মামলার আসামিরা হলেন- বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাড়াদী গ্রামের মৃত মছেফ মল্লিকের ছেলে মো. আবু জাফর মল্লিক, আবু জাফর মল্লিকের ছেলে রাজু মল্লিক, মৃত আনছার মল্লিকের ছেলে মো. সাগর মল্লিক, সজীব মল্লিক, মো. নাসির মল্লিকের ছেলে জাহাঙ্গীর মল্লিক, বিদ্যুৎ মল্লিক, মৃত মাইনউদ্দিন সিকদারের ছেলে মো. মোজাহার সিকদার (মুজা), রাজধরপুর (বিলপাড়া) গ্রামের মৃত আফছার মোল্লার ছেলে মো. হারুন মোল্লা, শেকাড়া গ্রামের মৃত নওয়াব আলীর ছেলে মো. দিলু মিয়া, বালিয়াকান্দি গ্রামের মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে রিজু আহম্মেদ, খালকুলা গ্রামের তছে শেখের ছেলে মো. সামাদ শেখ, পাংশা উপজেলার মৈশালা গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মল্লিকের ছেলে মো. ফজলুল হক চিন্টু মল্লিক, সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম এমপির ছেলে মিতুল হাকিম ও জঙ্গল ইউনিয়নের বন্যতৈল গ্রামের ক্ষিরোধ বরণ বসুর ছেলে এবং জঙ্গল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কল্লোল কুমার বসুসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন।
Advertisement
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১০৯ শতাংশ জমির মধ্যে ১০০ শতাংশে আফজাল মিয়া মেহগনি বাগান ও ৯ শতাংশে মৌসুমি ফসলের চাষাবাদ করতেন। মামলার কারণে আফজাল মিয়ার ছেলের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মিতুল হাকিম। চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ২০১৮ সালের ১২ মে থেকে ১৪ মে বিকেল পর্যন্ত মিতুল হাকিম ও কল্লোল বসু প্রাইভেটকার যোগে এবং অন্যান্যরা মোটরসাইকেলে এসে ১০-১৫ গাছ কাটার করাত ও ৩০-৩৫ জন শ্রমিক, ৪-৫টি ট্রাক, অস্ত্রসহ মেহগনি বাগানে এসে গাছ কাটতে শুরু করে।
মামলায় আরও বলা হয়, ওই পথ দিয়ে আফজাল মিয়ার ছোট ছেলে শাহজাহান মিয়া বাজারে যাওয়ার পথে গাছ কাটা দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। খবর পেয়ে তার ভাই সাইফুল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ টাকাসহ ঘটনাস্থলে এলে তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।
মিতুল ও কল্লোলের নির্দেশে অন্যান্যরা তার কাছে থাকা ২০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে ছিনিয়ে নেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদার বাকি ৩০ লাখ টাকা মিতুল হাকিমের কাছে পৌঁছাতে নির্দেশ দেয়। বাগানের সব গাছ কেটে পাংশার নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়। চাঁদার টাকা মিতুল হাকিমের কাছে না পৌঁছালে পিতলের ট্যাবলেট খাইয়ে জীবন শেষ করে দেবে বলেও হুমকি দেয়। এসময় চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সাইফুল ইসলামকে কোপ দিলে তার বাম হাতের কনুইতে লেগে রক্তাক্ত জখম হয়। গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করলে তার ভাই শাহজাহান এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করে। এসময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়। ভয়ে সবাই চলে গেলে জমিতে থাকা সাড়ে ৩০০ মেহগনি গাছ কেটে ট্রাকে করে পাংশায় নিয়ে যায়। সাড়ে ৩০০ মেহগনি গাছের মূল্য এক কোটি ৫ লাখ টাকা।
মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম মিয়া বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে থানায় মামলা করতে গেলে মিতুল হাকিমের নাম শুনে মামলা গ্রহণ করে নাই। এখন দেশের অবস্থা ভালো হওয়ায় আদালতে মামলাটি করেছেন এবং আশা করছেন ন্যায়বিচার পাবেন।
Advertisement
রুবেলুর রহমান/জেডএইচ/এএসএম