স্যার, এটা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহফুজ স্যারের গাড়ি। স্যারের বাসা সামনের ওই কোয়ার্টারে। আজ হরতালের দিন। রাস্তা ফাঁকা। তাই এ সামান্য রাস্তার জন্য উল্টো অনেকটা পথ ঘুরে আসিনি। সাদা রংয়ের পাজেরো জিপের ড্রাইভার গাড়িতে বসে সামনে দাঁড়ানো একজন পুলিশ সার্জেন্টকে উদ্দেশ্য করে এ সব কথা বলছিলেন। কিন্তু পুলিশ সার্জেন্টের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি ড্রাইভারের দিকে না তাকিয়ে পকেট থেকে একটি নোট বুক বের করে তাতে গাড়ির নাম্বার, মালিকের নাম, মোবাইল নম্বর, ঘটনার সময় ইত্যাদি লিখে নিচ্ছিলেন। এ সময় ড্রাইভার বার বার ভুল হয়ে গেছে বললেও মুখে কিছু না বলে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা দেন। সার্জেন্টের পাশে থাকা ট্রাফিক কনস্টেবলকে ক্যামেরা দিয়ে গাড়ির একটি ছবি তুলে রাখার নির্দেশনা দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ের অদূরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আবাসিক কোয়ার্টারের সামনে এমনই এক দৃশ্য চোখে পড়ে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্ট বলেন, সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলন ডেকে উল্টোপথে গাড়ি চালানো নিষেধ করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও এ সংক্রান্ত কঠোর নিদের্শনা এসেছে। তাই আমরা ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা না করে উল্টোপথে আসা গাড়ি আটকে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ডিসি স্যারকে জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, গত ৪ মে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উল্টোপথে গাড়ি চলাচল ও যত্রতত্র পার্কিং, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী স্টিকার ছাড়া গাড়িতে কোনো অস্থায়ী স্টিকার লাগানো যাবে না উল্লেখ করে বলেন, এসব স্টিকার লাগিয়ে অপরাধীরা অপরাধ করছে। পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা বোমাবাজির মতো কাজ করছে। রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ ট্রাফিক আইন না মানা। সম্প্রতি রাজধানীর এ সমস্যা সমাধানের জন্য পরিচালিত অভিযানে ৯ হাজার ৮৫১টি মোটরসাইকেল এবং ২১ হাজার ৪১৫টি যানবাহনকে মামলা দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে কমিশনার আরো বলেন, মাইক্রোবাসগুলোতে বিল্ট-ইন রঙিন কাঁচ ব্যতীত টিনটেড পেপার লাগানো অস্বচ্ছ স্টিকার লাগানো যাবে না। উল্টোপথে গাড়ি চলাচল ও যত্রতত্র পার্কিং করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংসদ সদস্য, তাদের পরিবার, সংসদ সচিবালয় ও সংসদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাড়ির জন্য নতুন স্টিকার তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো বিশেষভাবে চেক করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টদের নির্দেশ দেন কমিশনার। তবে কমিশনারের নির্দেশের পরও উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। খোদ পুলিশের গাড়িও উল্টোপথে চলাচল করছে!এমইউ/জেএইচ/পিআর
Advertisement