সুব্রত সাহা
Advertisement
রাইদাহ গালিবা আমাদের আত্মজা। এ শতাব্দির প্রথমদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনে পেয়েছিলাম একঝাঁক মেধাবী তরুণ-তরুণী। যাদের মননে ও মজ্জায় ছিল সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা। তারা কেউ কবিতা লিখতো, কেউ অভিনয় করতো, কেউ গান করতো—আরও কত কী? সহকারী ছাত্র উপদেষ্টা (কালচার) থাকায় এদের সাথে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের চেয়েও আত্মার আত্মীয়তা গড়ে ওঠে।
কানিজ পারিজাত (পলি) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে আমার ছাত্রী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি আবৃত্তি, একক অভিনয়—এগুলোর প্রতি ছিল ওর দারুণ ঝোঁক। ওরা পাস করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পর এ বন্ধন কিছুটা ছিন্ন হয়। ২০০৭ সালে আমি ঢাকায় আসার পর পলির (কানিজ পারিজাত) সাথে আমার আবার যোগাযোগ শুরু হয়। ২০১০ সালে ওর মেয়ে রাইদাহ গালিবা কুইনের জন্ম হয়। কুইনকে বরাবরই দেখেছি বইমেলায়।
মায়ের মতো শিশুটিও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সমস্ত যোগ্যতা অর্জন করে। আমি ওর ‘এক যে ছিল মুচি’, ‘ইমা ও দৈত্য’, ‘ভয়ংকর গাছ’ বইগুলো পড়েছি। এ ধরনের শিশুতোষ বই রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রগতি প্রকাশন থেকে বের করা হতো। রাইদাহ কি এদের পরবর্তী প্রজন্ম? এই যে ভালোবাসা পরিবেশ, পাখি, গাছপালার প্রতি বা এদের ধ্বংসকারী দৈত্যের প্রতি ঘৃণা—এগুলো হয়তো সমাজ বাস্তবতা। পরাবাস্তববাদী মনের অনুরণন।
Advertisement
আসলে কেউ ভাগ্য নিয়ে জন্মায় না, ভাগ্য লিখন বলেও কিছু নেই। তবে মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক পরিবেশ, ধর্মীয় পরিবেশ দ্বারা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়।
আচ্ছা, দুঃখ কি জেনেটিক? আমাদের দুঃখ কি নিউক্লিয়াসে দেওয়া থাকে? তাহলে এত তারার মেলা দপ্ করে নিভে গেল কেন? কুইনের (রাইদাহ গালিবা) চলে যাওয়ায় পলির (কানিজ পারিজাত) জীবনের শূন্যতাকে কীভাবে আমরা ব্যবচ্ছেদ করবো?
নভেম্বর মাস বাংলায় হেমন্ত। আকাশে চুপি চুপি চাঁদ, হেমন্তের ধানকাটা ক্ষেতের শূন্যতা, দূরে নীল কুয়াশার পাতলা চাদর, পেছনে বাঁশের কঞ্চিতে বসে আছে লম্বা কালো লেজের পাখি—হঠাৎ উড়ে আসে বাঁশঝাড়ের অন্ধকারে জোনাকির সবুজ মাংস খেতে। এক দানব পাখি আমাদের কুইনকে (রাইদাহ গালিবা) খেয়ে ফেলেছে! জোনাকিটা তার বইগুলোতে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছে হয়তো।
মাগো, তোমার কৃতিত্বকে আমরা বাঁচিয়ে রাখবো। তুমি জোনাক পোকার মতো জ্বলবে অনন্তকাল...
Advertisement
লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এএসএম