বাংলাদেশের মানুষের সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কখনো ভাঙবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হাইকোর্ট। দেশের সব ধর্মের মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে থাকতে ভালোবাসে বলেও উল্লেখ করেছেন আদালত।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এসময় চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে বলে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।
আইনজীবী হত্যার ঘটনায় সরকারের পদক্ষেপের অগ্রগতি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, এ ঘটনাটি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে। একটিতে ১৩ জন, একটিতে ১৪ জন ও অন্যটিতে ৪৪ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
Advertisement
এসময় হাইকোর্ট বলেন, রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এটি শুনে আমরা আশ্বস্ত হলাম। এটিই ওনাদের (রাষ্ট্রের) দায়িত্ব। আশা রাখি সবাই এটি শুনে আশ্বস্ত হবেন। দেশের জানমালের কোনো ক্ষতি না হোক, আমরা সেটিই চাই।
আদালত বলেন, যেহেতু সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলা হলো, তাই এ মুহূর্তে আদালত আর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখছে না। আমরা মনে করি, আমাদের দেশের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ। এদেশে সব ধর্মের মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে থাকতে ভালোবাসে। সে ভালোবাসা কখনোই ভাঙবে না। আর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
গতকাল বুধবার হাইকোর্টের একই বেঞ্চে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির উদ্দিন। একই সঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আবেদন করেন এবং অন্তত দুই সপ্তাহ জরুরি অবস্থা জারির আর্জি জানান।
এরই একপর্যায়ে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শুনেন। অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টকে বলেন, ইসকনের ইস্যুটি দুর্ভাগ্যজনক। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ফৌজদারি অপরাধ। সরকার গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি দেখছে এবং যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবে। তবে এই সংগঠন (ইসকন) রেজিস্ট্রার্ড কি না, এই সংগঠন নিষিদ্ধ হবে কি না, এই সংগঠনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই সংগঠনের অস্তিত্ব কী, এর সবকিছু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।
Advertisement
তিনি বলেন, সরকার এই সংগঠনের (ইসকনের) খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবেন। এই পর্যায়ে কোনো রুল ও নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সবকিছু পর্যালোচনা করে তারপর যদি মনে হয় তখন দেখা যেতে পারে।
এরপর হাইকোর্ট এ বিষয়ে বুধবার (২৮ নভেম্বর) অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী আজ রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টকে আইনজীবী হত্যার ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখার বিষয়ে অবগত করেন।
আরও পড়ুন
ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি করছে ইসকন: হাসনাতদুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিসের গাড়িবহররাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গত সোমবার রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ আদেশের পর আদালত চত্বরে চিন্ময়ের বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা পুলিশের প্রিজনভ্যানের চারপাশে শুয়ে পড়েন। তারা চিন্ময়ের জামিনের দাবি জানান।
একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ (৩৫) হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
নিহত সাইফুল লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম