জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয় শিশু নুহা ও নাবা। চিকিৎসার জন্য নেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আট দফা অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বাড়িতে আসে তারা। সফল অস্ত্রোপচারের পর খুশির বন্যা বয়ে যায় বাবা আলমগীর হোসেন রানার পরিবারে। দীর্ঘ ৩২ মাস হাসপাতালে থাকার পর নুহা ও নাবা এখন কুড়িগ্রামে বাবার বাড়িতে। যমজ শিশু দুটির চঞ্চলতায় মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। আশপাশের লোকজনও প্রতিদিন আসছেন নুহা-নাবাকে দেখতে।
Advertisement
তবে চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। করতে হবে আরও একটি অস্ত্রোপচার। এজন্য দরকার লক্ষাধিক টাকা। টাকার চিন্তায় নুহা ও নাবার বাবা আলমগীর হাসেন ও মা নাসরিনের খুশি ম্লান হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে বাড়ি আলমগীর-নাসরিন দম্পতির। আলমগীর হোসেন রানা পেশায় একজন পরিবহন শ্রমিক। স্ত্রী নাসরিন বেগম ২০২১ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি বেসকারি ক্লিনিকে জোড়া লাগানো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো যমজ দুই কন্যাকে পেয়ে আনন্দের বদলে বিষাদ ভরে যায় এই দম্পতির মন। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার জন্য যেতে পারছিলেন না কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। এ অবস্থায় ওই বছরের ৪ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিসের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিশু দুটোকে।
জোড়া শিশুদের পৃথক করাসহ চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়। সেখানকার চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে আট দফা অস্ত্রোপচারের পর গতবছরের জানুয়ারিতে পৃথক করা হয় শিশু দুটিকে। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা মাইলফলক হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাদের।
Advertisement
অবশেষে সফল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা শেষে সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে হাসপাতাল ত্যাগ করে জোড়া শিশু নুহা ও নাবা। তাদের এই অকল্পনীয় পৃথক চিকিৎসা নিয়ে স্বস্তি ফিরলেও এখনো হতাশায় ভুগছেন আলমগীর-নাসরিন দম্পতি। প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ আর শেষ অস্ত্রোপচারের জন্য তিন লাখ টাকা কীভাবে জুটবে সেই চিন্তায় দিন কাটছে এ দম্পতির।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নুহা-নাবার চিকিৎসার পেছনে প্রায় ৫১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। মানুষই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। ওদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি আমার পরিবহনশ্রমিকের কাজটাও হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে বেকার। নিজের সন্তানদের চিকিৎসা কীভাবে করাবো জানি না। দেশের মানুষ যদি আরেকবার পাশে দাঁড়াতো, নিষ্পাপ বাচ্চা দুটোর জীবন স্বাভাবিক হতো।’
প্রতিবেশী হযরত আলী বলেন, ‘আলমগীর হোসেন রানা গরিব মানুষ। ওর বাচ্চা দুটোকে দেখে খুব মায়া হয়। কেউ ফুটফুটে বাচ্চা দুটোর পাশে দাঁড়ালে পরিবারটির উপকার হতো।’
আরেক প্রতিবেশী আবু তালেব বলেন, ‘রানার মেয়ে দুটোকে দেখতে এসেছি। পুতুলের মতো দেখতে। একটি মেয়ে এখনো অস্বাভাবিক আছে। শুনলাম আরও নাকি অস্ত্রোপচার বাকি আছে। ওই চিকিৎসার জন্য নাকি জনপ্রতি লক্ষাধিক টাকার দরকার।’
Advertisement
স্থানীয় সাবেক ইউপি মেম্বার মো. নুর ইসলাম বলেন, সবাই সহযোগিতার হাত বাড়ালে আশা করি নুহা ও নাবার শেষ অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। সচ্ছল ব্যক্তিদের উচিত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।
ফজলুল করিম ফারাজী/এসআর/জিকেএস