ধর্ম

হজরত খাদিজার (রা.) জন্য সালাম ও সুসংবাদ

হজরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.) ছিলেন নবিজির (সা.) প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী। নবিজি (সা.) পঁচিশ বছর বয়সে নিজের চেয়ে কিছুটা বয়োজ্যেষ্ঠ খাদিজাকে (রা.) বিয়ে করেন এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় কাউকে বিয়ে করেননি। ছেলে ইবরাহিম ছাড়া নবিজির (সা.) সব সন্তানেরই জন্ম হয়েছিলো হজরত খাদিজার (রা.) গর্ভে।

Advertisement

নবিজির (সা.) জীবনের বড় অংশজুড়ে হজরত খাদিজাই (সা.) ছিলেন তার সঙ্গী ও সব কাজে তার সহযোগী। ইসলামের আবির্ভাবের পর মক্কার কঠিন দিনগুলোতে খাদিজা (রা.) তাকে সমর্থন করেছেন, সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন।

খাদিজাকে (রা.) নবিজি (সা.) অত্যন্ত ভালোবাসতেন। নিজের ভাবনা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তার কাছে তুলে ধরতেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে পরামর্শও করতেন। তার ওপর প্রথম ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি যখন ভয় পেয়ে যান, তখন তিনি ছুটে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হজরত খাদিজার (রা.) কাছে। তাকে তিনি খুলে বলেছিলেন, সেই আশ্চর্য ঘটনা, নিজের ভয় ও আশংকার কথা। তখন হজরত খাদিজা তাকে সান্ত্বনা দেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর নবিজি (সা.) খাদিজার (রা.) কাছে কম্পিত হৃদয়ে ফিরে এলেন এবং বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলে তার ভয় কিছুটা কাটলো। তিনি খাদিজার (রা.) কাছে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি আমার জীবন সম্পর্কে শঙ্কাবোধ করছি।

Advertisement

খাদিজা (রা.) তাকে বললেন, কখনো না, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্য কথা বলেন, অনাথ অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদারি করেন, বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি)

খাদিজা ছিলেন নবিজির ওপর ঈমান আনা প্রথম মানুষ; নারী-পুরুষ সবার মধ্যে প্রথম। নবিজির ওপর ঈমান ও নবিজিকে সমর্থন-সহযোগিতার কারণে তিনি আল্লাহর কাছেও মর্যাদা লাভ করেন। বিভিন্ন হাদিসে তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মুমিন নারীদের একজন বলা হয়েছে। জীবনকালেই তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম ও জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই যে খাদিজা আপনার কাছে আসছেন, তার সাথে একটি পাত্র রয়েছে, যাতে তরকারি আছে বা (বর্ণনাকারী বলেন) খাবার অথবা পানীয়। তিনি আপনার কাছে এসে পৌঁছলে তাকে তার রবের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাকে জান্নাতে একটি বাঁশের ঘরের সুসংবাদ দেবেন, যেখানে কোনো শোরগোল ও ক্লান্তি থাকবে না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এ হাদিসে বাঁশ বলে দুনিয়ার সাধারণ বাঁশ উদ্দেশ্য নয়। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) আল্লামা ইবনুত ত্বীনী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, এ হাদিসে বাঁশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফাঁপা প্রশস্ত মণি-মুক্তা।

Advertisement

তবারানির একটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত ফাতেমা (রা.) আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করেছেন যে, খাদিজার (রা.) জান্নাতের ঘরটি কি দুনিয়ার এই বাঁশের তৈরি হবে? উত্তরে তিনি বলেছেন, না, তা হবে মুক্তা ও ইয়াকুত পাথরে গাঁথা বাঁশের দ্বারা তৈরি। (তবারানি কাবির, মাজমাউয যাওয়াইদ)

ওএফএফ/এএসএম