গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যে কোনো ধরনের সমালোচনা আমরা ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও সেই কথাই বলেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে। এতে আমরা নিজেদের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাই, শুধরে নিতে পারি। সেই জায়গা থেকে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা থেকে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। তারা সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আবার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।
Advertisement
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতা কিংবা সংবাদমাধ্যম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন অংশীজন একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। এখানে অনেক পরস্পরবিরোধী অংশীজন থাকে। ওয়েজবোর্ডের কথাই যদি বলি, তাহলে সম্পাদক, মালিক এবং রিপোর্টাররা একেকজন একেকটা পক্ষ নেবে। সবাই মিলে এক জায়গায় আসতে হবে।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনন্য আইনগুলো আমাদের পর্যালোচনার মধ্যে আছে। সংস্কার কমিটিরও প্রধান কাজ হবে আইনগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা। যত কম সংখ্যক আইন এবং কম বাধা তৈরি করা যায়, ততই স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভালো।
নাহিদ বলেন, বিগত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা আসলে কী ছিল, কারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, এটা সুস্পষ্ট থাকা উচিত। যদি কেউ ভুল করে থাকে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে তাকে ভুল স্বীকার করে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। ৫ আগস্টের পর কেউ যদি ভোল পাল্টে ফেলে, এটাতো হওয়া উচিত নয়, তাকে সত্যটা স্বীকার করা উচিত। সত্যের মধ্যদিয়ে আসলেই রিকনসিলেশন সম্ভব।
এই উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার আসলে একটি ভিন্নধর্মী সরকার। সেই জায়গায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের হয়তো অনেক ভুল থাকবে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা সেটা আন্তরিকভাবেই নেবো।
Advertisement
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, একটা মিথ্যা খবর, গুজব অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সেই জায়গায় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, তাদের নিজস্ব কোনো প্রচারমাধ্যম নেই। ফলে আমরা গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের নিজস্ব কোনো কর্মীবাহিনী নেই বা গণমাধ্যম নেই যে তারা বর্তমান সরকারের কার্যক্রম প্রচার করবে। সেজন্য আমরা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
আরও পড়ুন
সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে নয়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় গ্রেফতার পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর ও বন্ধের চাপ সহ্য করা হবে না: তথ্য উপদেষ্টা পুলিশের দুর্বলতা ছিল বলেই ঘটনা সংঘর্ষের দিকে গেছে: উপদেষ্টা নাহিদতিনি বলেন, গত ১৬ বছরে একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল। সেটাকে রাতারাতি বদল করে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশকে গ্রামে ট্রান্সফার করা হয়েছে, মফস্বলের পুলিশ ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের একটু সময় লাগবে গুছিয়ে উঠতে। আর তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আমাদের অনেক তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। সেই জায়গা থেকে আমরা সহায়তা কামনা করছি এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী এ রকমই থাকবে, নাকি পুলিশ আরও কঠোর অবস্থানে যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি তো পরিবর্তন হবে। আমরা পুলিশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। পুলিশ সংস্কার কমিশন আছে, তারা সুপারিশ করছে। সবাইকে বুঝতে হবে আমরা বিপ্লব পরবর্তী অবস্থার মধ্যে আছি। বিপ্লবের মধ্যেই ল অ্যান্ড অর্ডারের পরিবর্তন হয়। তবে সেটা তৈরি করতে কিছুদিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, যে কোনো দেশে বিপ্লব পরবর্তী ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণের মধ্যে যে নানা ধরনের শক্তির অংশ থাকে, তাদের অনেক ভূমিকা রাখতে হয়। যেমন সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সহায়তা দরকার, সেটা আমরা বারবার চাচ্ছি। পুলিশ অবশ্যই কঠোর হবে। তবে নিপীড়কের ভূমিকায় না যায় বা আমরা একটা পুলিশি রাষ্ট্র যেভাবে দেখেছি সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা উভয় সংকটের মধ্যে আছি। আশা করছি সে জায়গা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারবো। আমরা কখনোই চাই না পুলিশ জনগণের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়াক, আন্দোলনে গুল চালাক। অবশ্যই পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা দেবে, সে জায়গায় পুলিশ কঠোর হবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ফেসবুক এনালাইসিস করেন, তাহলে দেখবেন গতকাল সোরওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা যে নিহত হয়েছেন, সেটা কিন্তু বিগত সরকারের দলীয় কর্মীরা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। মূলত তারা তো যেকোনো ভাবে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চাইবে, উত্তেজনা তৈরি করতে চায়। সেই ষড়যন্ত্র প্রতিদিনই সরকারের বিরুদ্ধে আছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সে টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে দেশে এবং দেশের বাইরে এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব ছাড়ানোর জন্য।
‘সেই জায়গায় সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বেশি। তারা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে পারে তাহলে বাংলাদেশের জনগণ মনে রাখবে। আমাদের এই পরিবর্তন সময়ে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম একটা বড় জায়গা। ষড়যন্ত্র আছে, সেই ষড়যন্ত্র আমরা উড়িয়ে দিতে চাই না। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব ও করণীয় সেটা করছি। আমরা আপনাদের সমালোচনা নিচ্ছি ও সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’ বলেন নাহিদ ইসলাম।
গত কয়েকদিন ধরে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো অফিসের সামনে হামলা চালানো হয়েছে, সেটা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি কি না? সেক্ষেত্রে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, গতকাল বলেছি ল অ্যান্ড অর্ডারের সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে, সে জায়গা থেকে সরকার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে, সেটা অবশ্যই আমরা আইনগতভাবে দেখবো। এটা কেবল আইনি বিষয় না, বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। মানুষের মনেও নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেটা স্পষ্ট করা সেই গণমাধ্যমের দায়িত্ব। মানুষের সঙ্গে সংলাপে বসে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে স্পষ্ট করা। তবে সরকার তার ভূমিকা যেটা আছে সেটা পালন করবে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে হামলা হলে সেটা আমরা মেনে নেবো না, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো। পাশাপাশি জনগণ সভা-সমাবেশ করলে শান্তিপূর্ণভাবে করবে, সে আহ্বান জানিয়েছি। একই সঙ্গে পুলিশ যেন দায়িত্বশীল আচরণ করে, শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সমাবেশ করতে দেয়, আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
গণমাধ্যমের ওপর যে বিক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা ষড়যন্ত্রের একটা অংশ কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা যারা আন্দোলন করছে তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদের কাছে জিজ্ঞসা করেন। তারা কেন বিক্ষোভ প্রকাশ করছে, এটা চিহ্নিত করা উচিত। এজন্য লাঠিপেটা করে সড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাদের সঙ্গে কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
সভায় ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, অর্থ সম্পাদক জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারী সম্পাদক মাহমুদা ডলি, ক্রীড়া সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক সলিম উল্লাহ মেজবা, কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য হাবিব রহমান, সাঈদ শিপন, মুহিব উল্লাহ মুহিব, রফিক মৃধা ও শরিফুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।
এমএএস/ইএ