একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। এর মাধ্যমে চার দশকের বেশি সময় আগের ঘৃণ্য ইতিহাসের দায়মুক্তি হলেও নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে আজও কাঁদছে পাকিস্তান। বুধবার জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, জম্ম-কাশ্মীরসহ দেশটির বিভিন্নস্থানে গায়েবানা জানাজায় অংশ নিয়েছে। জানাজায় পাক জামায়াতের কর্মী, সমর্থক ও নেতারা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভও করেছে পাক জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি জমিয়তে তালেবা। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, বাংলাদেশে বিচারিক হত্যাকাণ্ড চলছে। জামায়াত নেতা নিজামীও বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। পাক জামায়াতের শীর্ষ নেতারা একটি জরুরি বৈঠকও করেছেন।এদিকে, নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেছেন।একাত্তরে ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ও গণহত্যায় অভিযুক্ত তৎকালীন আল বদর নেতা নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত জামায়াত নেতাদের নিয়ে পাকিস্তান সরকারের অবস্থানও বিতর্কিত। ৫ মে নিজামীর রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর গত শুক্রবার পাক পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত বলে মন্তব্য করে পাকিস্তান। একই ভাবে জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের নেতা-কর্মীরাও নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। পরে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সতর্ক করে দেয় ঢাকা। শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে ২০০০ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আসা মতিউর রহমান নিজামীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ; পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে। পঞ্চম মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হলো। একই সঙ্গে তিনি প্রথম কোনো দলীয় প্রধান ও দ্বিতীয় সাবেক মন্ত্রী একাত্তরে সংঘটিত অপরাধের জন্য ফাঁসিতে ঝুলে যার দণ্ড কার্যকর হলো। ১৯৬৬ থেকে তিন বছর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর একাত্তরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন নিজামী। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার লড়াই তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।১৯৭১ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এপ্রিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে মূলত ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় আলবদর বাহিনী। ছাত্রসংঘের নেতা হিসাবে আলবদরের নেতৃত্বও নিজামীর কাঁধে বর্তায়। এই আলবদর বাহিনী একাত্তরে গণহত্যায় মেতে উঠেছিল। স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিল আলবদর। আলবদর গঠিত হওয়ার পর ২৩ এপ্রিল দৈনিক পাকিস্তানে ছাত্রসংঘের সভাপতি নিজামীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়, যাতে বলা হয়, ‘আলবদর একটি নাম, একটি বিস্ময়। আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই আলবদর। যেখানে দুস্কৃতকারী সেখানেই আলবদর। ভারতীয় চরদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।’এসআইএস/এবিএস
Advertisement