দেশজুড়ে

টেকনাফে দিনের বেলায়ও অপ্রতিরোধ্য অপহরণকারীরা

কক্সবাজারের টেকনাফে দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ চক্র। পাহাড়ের পাদদেশে ক্ষেতে কাজ করতে বা পাহাড়ে কাঠ আনতে যাওয়াদের ধরে মুক্তিপণ আদায় করে এখন লোকালয়ে এসে টার্গেট করা লোকজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

Advertisement

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ সদরে অটোরিকশা থামিয়ে দুই মৎস্য ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল মাঠপাড়ার রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর খবর পেয়ে অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ, এমনটি জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

ওসি জানান, তাৎক্ষণিকভাবে অপহৃত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও তারা টেকনাফের স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী বলে জানতে পেরেছি।

Advertisement

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, সকালে টেকনাফ পৌরসভার বাসস্টেশন থেকে অটোরিকশায় (সিএনজি) উখিয়ার সোনারপাড়া-টেকনাফ এলজিইডি সড়ক হয়ে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর যাচ্ছিলেন দুই মাছ ব্যবসায়ী। এ সময় গাড়িতে তাদের সঙ্গে আরও এক যাত্রী ছিলেন। গাড়িটি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল মাঠপাড়ার রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত গাড়ির গতিরোধ করে দুই মাছ ব্যবসায়ী ও অপর যাত্রীকে অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায়। তবে কিছু দূর গিয়ে দুই মাছ ব্যবসায়ীকে রেখে অপর যাত্রীকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।

ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরে অবস্থান করা লেঙ্গুরবিল মাঠপাড়ার স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করলেও দেখেছি দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে দুজন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়। কৌশলে নিজের মুঠোফোনে ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র ধারণ করেন তিনি। পরে তা পুলিশকে জানান। অপহরণকারী ব্যক্তিরা স্থানীয় বাসিন্দা বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত ওই দুজনের পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২ নভেম্বর সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং করাচিপাড়ার পাহাড়ি এলাকায় খামারে কাজ করার সময় একদল সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে তিনজন রোহিঙ্গা ও ছয়জন স্থানীয় বাসিন্দাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।

Advertisement

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৪৫ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৮৮ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৭ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্র উল্লেখ করেছে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জিকেএস