পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কমপক্ষে ৮২ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতা বহু মানুষের প্রাণহানির পর সেখানে সংঘাতে লিপ্ত গোষ্ঠীগুলো সাতদিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সেখানকার কর্তৃপক্ষই এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে। খবর বিবিসির।
Advertisement
সহিংসতার প্রতিবাদে লাহোরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। আফগান সীমান্তের কাছে উপজাতীয় জেলা কুররামে তিন দিনের এ সহিংসতায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৫৬ জন।
সহিংসতার সূচনা হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। শিয়া মুসলিমদের একটি গাড়ী বহরে এক বন্দুকধারীর হামলার পর সহিংসতা শুরু হয়। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হওয়ার পর শুরু হয় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা।
সেখানকার শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে ভূমি নিয়ে বিরোধের জেরে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
Advertisement
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির খবর অনুযায়ী, রোববার মধ্যস্থতার পর সরকারি মুখপাত্র মুহাম্মদ আলী সাইফ বলেছেন, শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা সহিংসতা বন্ধ করতে একমত হয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষ ও গাড়ী বহরে হামলার ঘটনায় ২১ নভেম্বর থেকে তিন দিনেই মারা গেছে ৮২ জন ও আহত হয়েছে আরও ১৫৬ জন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে তিনি বলেছেন, নিহতদের মধ্যে ১৬ জন সুন্নি সম্প্রদায়ের। বাকীরা শিয়া মুসলিম।
বৃহস্পতিবার গাড়ী বহরে হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। এর আগে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জাভেদ উল্লাহ মেহসুদ এএফপিকে বলেন, প্রায় দশজনের মতো হামলাকারী গাড়ী বহরে হামলায় জড়িত ছিলেন। তারা রাস্তার উভয় দিক থেকে নির্বিচারে গুলি করেছে।
যাত্রীদের বেশিরভাগ শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলের পার্বত্য এলাকার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। গাড়ী বহরটি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সেটি নতুন করে চালু করা হয়েছে যেখানে পুলিশের সহায়তা নিয়ে এখনো সীমিত সংখ্যক গাড়ী চলাচল করে।
Advertisement
পাকিস্তানের খুবই প্রত্যন্ত ওই অঞ্চলে বৃহস্পতিবার বন্দুকধারীরা যখন হামলা শুরু করে তখন ওই গাড়ী বহরে অন্তত ২০০ জনের মতো যাত্রী ছিল।
সেখানকার একটি গাড়ীতে থাকা যাত্রী সাঈদা বানু বিবিসিকে বলেন, তার মনে হচ্ছিল যে তিনি মারা যাবেন। তিনি তার সন্তানদের নিয়ে গাড়ীর নিচে লুকিয়ে ছিলেন।
এরপর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে শুক্র ও শনিবার ওই এলাকার অধিবাসীদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান। সুন্নি অধ্যুষিত একটি গ্রামের এক অধিবাসী জানান তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। তিনি বলেন, আমরা রাতভর গুলির শব্দ শুনেছি। আমি আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের পাহাড়ের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছি।
আপনি দেখছেন যে, এখন কেমন শীত পড়েছে। কিন্তু এছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। এখানকার বাকী সবাইও তাই করেছে। গত কয়েকমাসে ওই এলাকায় হামলা ও পাল্টা হামলার আরও ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
সে কারণে স্থানীয় ট্রাইবাল কাউন্সিল উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে আসছিল। পেশোয়ারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের হেলিকপ্টার ওই অঞ্চলে যাওয়ার পর ওই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করেও গুলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাঠ ছাড়তে নারাজ ইমরান সমর্থকরা, পাকিস্তানে চরম উত্তেজনা ইসলামাবাদের দিকে এগোচ্ছেন ইমরান খানের সমর্থকরাওই অঞ্চলে প্রায়ই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এসব সহিংসতা বেশি হয়ে থাকে। তবে কুররাম এলাকাটির সাথে আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রদেশের সীমান্ত আছে। আফগানিস্তানের ওই এলাকাতেও শিয়া বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় আছে।
টিটিএন