প্রবাস

চলুন গ্রামে ফিরে যায়

দেশ স্বাধীন হলো আর গ্রামের সবকিছু শহরে চলে গেলে—রেখে গেলো শুধু হাহাকার! বলছি বাংলাদেশের কথা। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে দক্ষতা, কর্মক্ষমতা, বিলাসিতা, শিক্ষা, বিচার ব্যবস্থা—যা কিছু ভালো ছিল, তার সবকিছু নিয়ে গেলো আমলাতন্ত্ররা শহরে। কিন্তু অভাগা গ্রামকেন্দ্রিক সেই বাংলাদেশে শুধু হাহাকার রয়ে গেলো। কিন্তু কেন এমনটি হলো? এমন তো কথা ছিল না রবীন্দ্রনাথের সেই জাতীয় সঙ্গীতে। তাহলে কেন এমনটি হলো?

Advertisement

বাংলাদেশের উন্নয়ন, গ্রামীণ-শহুরে বৈষম্য এবং জাতির সামগ্রিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা চলছে, সেখানে গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্যের মাত্রা দিন দিন বেড়েছে। এক সময়ের সোনার বাংলা, যার মাটি ও মানুষের সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ ছিল, সেই দেশেই কেন এখন গ্রামের মানুষ কেবল হাহাকারে দিন কাটায়? এই বিষয়টি একটি গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

ছোটবেলায় দেখেছি, গ্রামে গোলমাল হলে মুরব্বিরা বসে মীমাংসা করেছেন। এখন বিলেতের আইন প্রণয়ন করা হয়, গ্রামের সেই মেহনতি মানুষকে শহরে নিয়ে। কোথায় খাবে, কোথায় থাকবে, কার কাছে যাবে, কাকে ধরবে এবং কত টাকা ঘুস দেবে—এই হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ! হাজার বছর আগের সেই লালন শাহের বাংলাদেশ এখন ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় বন্দি। যেখানে যে একবার ঢুকেছে, সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাকে কীভাবে নতুন করে গড়ে তোলা সম্ভব—সেটাই এখন ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরশাসকের পতনের পর, জাতির দাবি হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি সংস্কার এবং রূপরেখা প্রণয়ন করা। এর জন্য সর্বপ্রথম প্রযুক্তিকে গ্রামে নিয়ে আসতে হবে। বিত্তের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা—সব কিছু কেন্দ্রিক গ্রামে আনুন, নতুন বাংলাদেশ গড়ুন। কীভাবে?

স্বাধীনতার পর পরিবর্তনের সূচনা:

Advertisement

স্বাধীনতার পর জাতি একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও আত্মনির্ভরশীল দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই স্বপ্ন পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। দারিদ্র্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থা পর্যন্ত সব কিছুতেই শহরের প্রতি মনোযোগ বেশি ছিল, ফলে গ্রামীণ উন্নয়ন সেই অনুপাতে হয়নি। এই কেন্দ্রিকতার কারণেই গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শহর-কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে।

বর্তমান বৈষম্য:

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও সুযোগ-সুবিধা শহরে কেন্দ্রীভূত। সরকারি দপ্তর, উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা সবই শহরাঞ্চলে অবস্থিত। ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ অঞ্চল থেকে মানুষ জীবিকা ও সেবা পেতে শহরমুখী হয়ে পড়ছে। তাছাড়া, বর্তমানে বিলাসবহুল জীবনযাত্রার মান ধরে রাখতে অনেকেই শহরে অবস্থান করতে চান। ফলে, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হওয়ায় গ্রামগুলো জনশূন্য হচ্ছে।

প্রযুক্তির অভাব ও কৃষি উৎপাদনে স্থবিরতা

Advertisement

গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা এবং দক্ষতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ গ্রামীণ অঞ্চলে প্রযুক্তির অভাব এবং পুরোনো পদ্ধতিতে চাষাবাদ গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্থবির করে তুলেছে। শহরে এসে যারা গ্রামীণ কৃষিজীবী ছিলেন, তাদের বড় একটি অংশ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রামীণ চাষাবাদ, পশুপালন এবং মৎস্যচাষের আধুনিকায়ন সম্ভব হলে শহরমুখিতা কমবে। এটি তখনই কার্যকর হবে যখন রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে জনগণের কল্যাণ।

বাংলাদেশে সেবামূলক রাজনীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা:

প্রত্যেক রাষ্ট্রের রাজনীতি সেই রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড, যা জনগণের সেবায় নিবেদিত থাকা উচিত। একটি আদর্শ রাজনৈতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সুশাসনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায়ই ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতার লোভ এবং দুর্নীতি জড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।

রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনীতি কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি জনগণের সংগ্রাম, স্বাধীনতা অর্জন এবং মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক। তবে বর্তমানে রাজনীতি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত লাভ ও ক্ষমতা দখলের কেন্দ্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, যেখানে জনকল্যাণের আদর্শ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতিহাসের নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর দেশের রাজনৈতিক চেতনায় এক নতুন সূচনা হয়। তবে কালের প্রবাহে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থ রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে তোলে। আজ রাজনীতিতে জবাবদিহিতার অভাব এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

রাজনৈতিক সংকট ও দুর্নীতি:

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও সংকটের প্রভাব দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গভীরভাবে আঘাত হেনেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনৈতিক নেতারা মাঝে মাঝে জনগণের বিশ্বাস নষ্ট করেছেন, যা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা কমেছে, এবং ভোটারদের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে ক্ষমতায় থাকা মানেই স্বার্থপরতা ও দুর্নীতি।

জনকল্যাণ ও সেবামূলক রাষ্ট্র সংস্কার:

সেবামূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সেবামূলক কাঠামোয় কিছু মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত।

১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে উন্নতি আনতে হবে, যেন সেবামূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত হয় এবং দেশকে স্বনির্ভর করে তোলে।

২. শিক্ষা: মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে যুবসমাজের কর্মসংস্থানের পথ সুগম করতে হবে। শিক্ষাকে আরও আধুনিক ও দক্ষতাভিত্তিক করতে হবে।

৩. স্বাস্থ্যসেবা: গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও আধুনিক করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান জরুরি।

৪. বিচার ব্যবস্থা: বিচার ব্যবস্থা কার্যকর ও দ্রুত করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করলে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

৫. জনগণের অংশগ্রহণ: জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে জনগণের মতামত গ্রহণ এবং তাদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নয়ন: বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সামাজিক বৈষম্য হ্রাসের জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব। এর জন্য কয়েকটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

• স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন: স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

• অবকাঠামো উন্নয়ন: গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সড়ক, ব্রিজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

• সামাজিক নিরাপত্তা: দরিদ্র জনগণের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে, যা তাদের সরকারি সহায়তা সহজলভ্য করবে।

নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি:

বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দায়িত্বশীলতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। দলগুলোকে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সমাধান: একটি নতুন দিগন্তের সূচনা

গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে প্রথমেই শহরের প্রতি অত্যধিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে গ্রামের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এটি অর্জনের জন্য কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে;

১. প্রযুক্তি ও শিল্পায়নে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:

আধুনিক প্রযুক্তি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশে আমাদের গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং সমন্বিত পরিকল্পনা। গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং অর্থনীতির উন্নয়নে সোলার শক্তি বা সৌরবিদ্যুৎ একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এখনো দুঃসাধ্য। একই কারণে, গ্রামীণ অঞ্চলে কলকারখানা স্থাপন, উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা, কিংবা আধুনিক যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

শহরমুখী জনস্রোত মূলত এই চ্যালেঞ্জগুলোরই ফল। বিদ্যুৎহীন গ্রামে আধুনিক জীবনের সুবিধা পাওয়া যায় না, যার কারণে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছে। দেশের বর্তমান অবকাঠামোতে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান প্রায় অনুপস্থিত। অথচ যেখানে দেশে দিনের বড় অংশ সূর্যের আলো পাওয়া যায়, সেখানে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট, বাজার, মাঠ এবং ঘরগুলোতে সোলার বিদ্যুতের ব্যবহার একটি যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে।

আমার সদ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ফুয়ের্তেভেন্তুরা দ্বীপে এই সম্ভাবনার বাস্তব চিত্র দেখিয়েছে। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের এই অঞ্চলে রাস্তার আলোগুলো সৌরশক্তি ব্যবহার করে আলোকিত হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে যেখানে সূর্যালোকের অভাব নেই, সেখানে সোলার সিস্টেমের ব্যবহার এখনো সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের দেশে শিক্ষিত এবং উচ্চ বেতনের পেশাদার মানুষের অভাব নেই। অভাব কেবল ইনোভেটিভ চিন্তা এবং দেশের প্রতি আন্তরিক দায়বদ্ধতার। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সুবিধাবঞ্চিত জনগণ বারবার নিজেদের রক্ত-ঘাম দিয়ে দেশের ভিত্তি মজবুত করেছে, অথচ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এলিট শ্রেণির দুর্নীতির পাহাড় বাড়তে থাকলেও গ্রামের সেই কুলু এখনও কুলুই থেকে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং মানুষের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করার।

২. শিক্ষা ও কর্মসংস্থান: গ্রামীণ এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তরুণ প্রজন্ম কর্মসংস্থানের জন্য শহরে না গিয়ে গ্রামেই থেকে কাজ করতে পারে।

৩. স্বাস্থ্যসেবা: সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় উন্নত চিকিৎসা সেবা সরবরাহ করতে হবে, যেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শহরে এসে বিভ্রান্তিতে না পড়ে।

৪. বিচার ব্যবস্থা: স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং গ্রামীণ স্তরে সালিশ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ: বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে গ্রামীণ এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন করা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত।

৬. বাজেট বরাদ্দ: গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের দিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শহুরে কেন্দ্রীকতার পরিবর্তে গ্রামকেন্দ্রিক উন্নয়ন। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক সাম্য নিশ্চিত করতে হলে গ্রামীণ এলাকা ও শহরের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে হবে। সেবা ও সুযোগের সামঞ্জস্যতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এ বৈষম্য কমানো সম্ভব। রাজনীতিবিদদের স্বার্থকেন্দ্রিক মনোভাব ত্যাগ করে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।

অতএব, একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তি তৈরি করতে পারি, যা জাতির সকল স্তরে জনকল্যাণের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করবে। সুষ্ঠু রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি এবং সক্রিয় সামাজিক অংশগ্রহণই পারে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে। আসুন, আমরা সকলে একসাথে এগিয়ে যাই এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে গ্রাম-শহর বৈষম্য শুধু ইতিহাসের পাতাতেই থাকবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বৈষম্য কমাতে একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে দলগুলোকে রাজনৈতিক আদর্শ এবং মূল্যবোধকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। গ্রামীণ ও শহুরে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কার্যকরী ব্যবস্থা। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব, যদি আমরা সবাই একসাথে কাজ করি। সুতরাং, আসুন আমরা সকলেই আমাদের দায়িত্ব পালন করি এবং একটি নতুন, উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সক্রিয় ভূমিকা রাখি।

রহমান মৃধা, গবেষক লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেনইমেইল: Rahman.Mridha@gmail.com

এমআরএম/জেআইএম