ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের সামভাল জেলায় একটি মুঘল আমলের মসজিদে জরিপ চালানো কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে ৩ মুসলিম নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য।
Advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মসজিদটি যেখানে তৈরি করা হয়েছে সেখানে আগে মন্দির ছিল এমন দাবি করে আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদী কয়েজকন ব্যক্তি। এরপর আদালত তার পিটিশনের ভিত্তিতে সেখানে জরিপ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আদালতে দায়ের করা মামলায় বাদী পক্ষের দাবি, মসজিদের জায়গায় একসময় একটি মন্দির ছিল। পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ১৫২৯ সালে সম্রাট বাবর এই স্থানে থাকা মন্দির ধ্বংস করেছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মসজিদটিতে জরিপদল কাজ শুরু। পরে একদল জনতা জরিপে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, আর তাতেই ঘটনা রূপ নেয় সহিংসতায়। বিষয়টি জানাজানি হতেই হাজার খানেক লোক ঘটনাস্থলে জড় হয়।
Advertisement
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কয়েকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে ও অন্তত ১০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। সেসময় গুলিতে নিহত হন বিলাল আনসারি, নাঈম আহমেদ ও নোমান নামের তিন মুসলিম।
সামভাল জেলার পুলিশ সুপার কৃষ্ণ কুমার বিষ্ণোই বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। যারা এই সহিংসতায় যুক্ত, তাদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দ্র পেসিয়া জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে মসজিদের কাছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরানোর দৃশ্য দেখা গেছে। তারপরও নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী জরিপ চালানো হয়েছে।
আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন জানান, জরিপদল আদালতের নির্দেশ অনুসারে ছবি ও ভিডিওসহ স্থানের বিস্তারিত পরীক্ষা চালিয়েছে। জরিপ প্রতিবেদন ২৯ নভেম্বর জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
Advertisement
এই ঘটনা উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সরকার ইচ্ছা করে এই অশান্তি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, সামভালে গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। জরিপ দলকে সকালে পাঠিয়ে আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে বিতর্ক এড়ানো।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে উত্তেজনা তৈরি করেছে। তারা মূলত সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করে নিতে এই কাজ করেছে। কারণ গত মঙ্গলবারও সেখানে একবার জরিপ চালানো হয়েছিল। আজ রোববার সকালে কেন আবার সেখানে জরিপকারীরা গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বারক ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইন উল্লেখ করে জরিপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সামভালের জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের মতোই উপাসনালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।
এদিকে, জরিপের পক্ষে সমর্থকেরা এটিকে ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে সমালোচকদের দাবি, এটি ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইনের বিরোধিতা ও ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘন।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ