চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশি ‘রোভাস্টা জাতের’ কফির প্রথম চাষেই চমকে দিয়েছেন চাষিরা। পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৯ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে কফির আবাদ হয়েছে এবার। বাগানের প্রতিটি গাছেই কফির কমবেশি ফলন হয়েছে। গাছে গাছে লাল-বাদামি ও সবুজ রঙের এসব কফি দেখে মন জুড়াচ্ছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের। এ সফলতার মধ্য দিয়ে উপজেলা তথা দেশের কৃষি আরও একধাপ এগিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষিতে সীতাকুণ্ড উপজেলার সাফল্য বরাবরই ঈর্ষণীয়। স্থানীয় পাহাড় ও সমতল ভূমির উর্বর মাটিতে অসংখ্য সবজি ও ফল চাষের সফলতায় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে এ উপজেলার সুনাম। এবার সেই তালিকায় নতুন করে যোগ হলো ‘কফি চাষে সফলতা’। দীর্ঘ ২ বছরের চেষ্টায় গাছে কফির ফলন পেয়ে কৃষকদের সঙ্গে খুশি কৃষি কর্মকর্তারাও।
Advertisement
উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার পূর্বদিকে অন্তত দুই কিলোমিটার গহীন জঙ্গল পথে তিনটি পাহাড় পেরিয়ে একটি কফি ক্ষেত দেখা যায়। পিএইচপির পাহাড়ে ক্ষেতটিতে চাষাবাদ করেন মো. শহীদ নামের এক কৃষক। তিনি কফি ক্ষেতটি পরিচর্যা করছেন। মো. শহীদ জানান, পাহাড়ে কফি চাষ অনেক কঠিন।
প্রথম দিকে প্রচুর ব্যয় হয় একটি ক্ষেত তৈরি করতে। এ জমি পিএইচপি ফ্যামিলির। তাদের আগ্রহ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় বাগানটি গড়ে তোলা হয়। কফি চাষের জন্য প্রয়োজন আলো-আঁধারি পরিবেশ। বেশি রোদে কফি নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনেক বেছে এই পাহাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ৮০০টি রোভাস্টা জাতের কফির চারা রোপণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন বাড়িতে যেভাবে আঙুরের চারা রোপণ করবেন চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষগত দুই বছর আগে এসব চারা রোপণের পর থেকে নিয়মিত পানি দেওয়া, বাগান আগাছামুক্ত রাখাসহ গাছগুলোকে পরিচর্যায় অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপরও কফি চাষে সফল হবেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে গাছে গাছে কফি ফুল থেকে ফল ধরা শুরু হয়। এখন কিছু গাছে ফুল ও সবুজ কাঁচা ফল আছে। অনেক গাছে ফল পেকে লালচে-বাদামি আকার ধারণ করেছে। এসব দেখে তারা খুবই খুশি।
Advertisement
মো. শহীদ বলেন, ‘বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ নিয়মিত বাগানে এসে পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারি সার, কীটনাশকসহ নানা সুবিধা পাঠিয়েছেন। তাদের পরামর্শ ও এসব ব্যবহার করে আমরা কফির ফলন পেয়েছি।’
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষেতটিকে সফল করতে রোদ-বৃষ্টিতে কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়েছে, তা আমি আর কৃষক শহীদসহ সংশ্লিষ্টরা জানেন। এখন সফলতা দেখে বুক ভরে গেছে।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘কাজুবাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সলিমপুর, ভাটিয়ারী, কুমিরা, বাড়বকুণ্ড, সোনাইছড়ি, বাঁশবাড়িয়া, বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন ও পৌরসভার পাহাড়ের ৯ হেক্টর জমিতে বিদেশি রোভাস্টা জাতের কফি চাষ করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছি। এখন সবকটি বাগানে কফির ফলন এসেছে। আগামীতে চাষের পরিধি বাড়তে পারে।’
এসইউ/এএসএম
Advertisement