ফিচার

পুরোনো গাড়ির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ২ হাজার অতিথি

অনেকদিন একটি হাড়ি ব্যবহার করলেও দেখবেন তার উপর মায়া পড়ে যায়। একই রাস্তা ব্যবহার করেও কেমন আপন মনে হয়। বাড়ি তো আরও বেশি। এক বাড়িতে কিংবা একটি গাড়ি দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তা একেবারে আপন হয়ে ওঠে। বিকল্প ভাবাই যায় না।

Advertisement

এবার তেমনই এক নজির গড়লেন গুজরাটের আমরেলি জেলার লাঠি তালুকা শহরের পদরশিঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার। তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবহারের গাড়িটি পুরোনো এবং অকেজো হওয়ায় সেটির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করে।

অনেকেই পুরোনো গাড়িগুলোকে স্ক্র্যাপইয়ার্ডে দিয়ে দেয়। সেখানে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হয়। কখনো বা পুনরায় ব্যবহারের উপযোগীও করা হয়। কিন্তু এই পরিবার তাদের ব্যবহার অনুপযোগী গাড়িকে স্ক্র্যাপইয়ার্ডে না পাঠিয়ে সেটিকে মাটি খুঁড়ে সমাধিস্থ করেছে। গাড়িটি যতদিন তাদের সঙ্গে ছিল, ততদিন সেটি সৌভাগ্য বয়ে আনে।

তাদের ‘লাকি’ গাড়ির জন্য বিশাল সমাধি অনুষ্ঠান করে। আমরেলির লাথি তালুকের পাদর্শিংগা গ্রামে বৃহস্পতিবার সঞ্জয় পোলারা ও তার পরিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেখানে প্রায় ১,৫০০ জন লোক, সন্ন্যাসী ও ধর্মীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন ৫০০ বছরেও যে বই পাঠোদ্ধার করতে পারেনি কেউ

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, ১৮ বছরের পুরোনো মারুতি সুজুকি ওয়াগন আরের ছাদে গোলাপ ফুলের পাপড়ি বসানো। বাকি জায়গা গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো। এভাবেই সেটিকে আগে খুঁড়ে রাখা ১৫ ফুট গভীর গর্তে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

গাড়িটিকে এরপর সবুজ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। মাটি দেওয়ার আগে সঞ্জয় পলরার পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয় গাড়ির গায়ে। পুরো সময় মাইক থেকে ভেসে আসে হিন্দি সিনেমার গান, অন্যদিকে পুরোহিতেরা মন্ত্র উচ্চারণ করেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সন্ন্যাসী ও আধ্যাত্মিক গুরুরা। গাড়িটির শেষ যাত্রার ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে পেশাদার আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারদেরও আনা হয়। অতিথি আপ্যায়নে ছিল পুরি, চাপাতি, সবজি ও লাড্ডু।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কয়েকদিন আগে গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষের কাছে চার পৃষ্ঠার আমন্ত্রণপত্র পাঠান সঞ্জয় পলরা। এতে বলা হয়, ‘২০০৬ সাল থেকে এই গাড়ি আমাদের কাছে পরিবারের সদস্যের মতো ছিল। এর কল্যাণে আমরা ধনী হই। সমাজে আমাদের মান-সম্মান বাড়ে। এ কারণে বিক্রি না করে আমরা এটিকে আমাদের স্মৃতিতে চিরদিনের জন্য রেখে দিতে চাই। গাড়িটিকে তাই সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা।’

Advertisement

এমনকি তারা আরও বলেন। প্রতিবছর এইদিনে তারা সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে সাজাবেন। এখানে একটি গাছও লাগানো হবে। পরবর্তী প্রজন্ম যেন গাড়িটিকে ভুলে না যায় সেজন্যই প্রতিবছর এই আয়োজন করা হবে।

আরও পড়ুন বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা নারী হয়ে জন্মালেও এক সময় পুরুষ হয়ে যায় যে প্রাণী

সূত্র:অডিটি সেন্ট্রাল

কেএসকে/এএসএম