দেশজুড়ে

চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সড়ক অবরোধ

 

ছাত্র-আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা তারা লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান চলছিল। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

আন্দোলনকারীরা সড়কেই জোহরের নামাজ আদায় করেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজিব কুমার সরকার ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আকতার হোসেন এসে তাদের সঙ্গে কথা বলে দাবি পূরণে আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

এ সময় আন্দোলনে গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যাসহ আহত করার ঘটনায় মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিও জানানো হয়। অবরোধে আটকা পড়েছে যাত্রীবাহী বাস, তেলবাহী গাড়িসহ ছোটবড় বিভিন্ন যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েছেন এ সড়কে চলাচলকারীরা।

তবে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ডিসির প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্ত ও এসপির প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মোহাম্মদ সোহেল রানা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। এ সময় ডিসি ও এসপি না আসায় আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে এএসপির বক্তব্যে আন্দোলনকারীরা আশ্বস্ত হলেও এডিসির কথা মানতে রাজি হননি। জেলা প্রশাসক এসে তাদের সঙ্গে কথা বললেই তারা কর্মসূচি সমাপ্ত করবেন বলে জানানো হয়।

Advertisement

কর্মসূচিতে ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান, সাব্বির হোসেন রাসেলের স্বজন ও আহত সুজন, এমএ আরিফ, সাইফুল ইসলামসহ আহত অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারী ও স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে আহত সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা আহত হয়েছি, তারা যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। অর্থের অভাবে অনেকে সুচিকিৎসা করতে পারে না। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কারো খবর রাখে না। শহীদ পরিবারের সদস্যদের খবর নেয় না।

আন্দোলনে আহত এম এ আরিফ বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যরা খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা করে হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। খুনিরা বাহিরে ঘুরছে। তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আগামী তিন দিনের মধ্যে হত্যাকারী এবং তাদের দোসরদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মোহাম্মদ সোহেল রানা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেফতারে আমাদের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। স্পেশাল একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। আসামিদের লোকেশন চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এছাড়া কারা কারা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহে দেশের ইমিগ্রেশনগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অচিরেই আমরা একটি পজিটিভ রেজাল্ট দিতে পরবো।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্ত আন্দোলনকারীদের বলেন, ডিসি স্যার একটি মিটিংয়ে রয়েছেন। তার প্রতিনিধি হিসেবে আমি কথা বলতে এসেছি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকারের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া রাস্তা থেকে সরে না যাওয়ার ঘোষণা দেন।

৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আন্দোলনরত চারজন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আহত হয় দুই শতাধিক। এ ঘটনায় জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান করে দুটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এছাড়া আসামিরা আহত ও নিহতদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।

কাজল কায়েস/এফএ/জিকেএস