চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেপস্ট্রমে যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট (অনূর্ধ্ব-১৯) এর ফাইনালে তারা সবাই ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে ওপেন করেছিলেন দুই বাঁ-হাতি পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ তামিম। তিন নম্বরে খেলেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং পজিশন ছিল চার। অন্যদিকে ভারতের পক্ষে ব্যাট হাতে ইনিংসের ওপেন করেছিলেন জসস্বি জয়সওয়াল এবং তিন নম্বরে ব্যাট করেছিলেন তিলক ভার্মা।
Advertisement
প্রশ্ন হলো, ওপরে যাদের কথা বলা হলো- তারা এখন কে কোথায়? ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন দলের ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সাকল্যে রান করেছেন মোটে ৪৯। তার ব্যাট এখনো পঞ্চাশ স্পর্শ করেনি। সর্বোচ্চই ২৩ রান।
অন্যদিকে মাহমুদুল হাসান জয় ওয়ানডেতে জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। তবে ১৫ টেস্ট আর ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। টেস্টে মোটামুটি উৎরে (১৫ খেলায় ১ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে মোট রান ৭১৪) গেলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অবস্থা খুব খারাপ। ৩ ম্যাচে মাহমুদুল হাসান জয়ের রান মাত্র ৫।
অন্যদিকে তানজিদ তামিম ও তাওহিদ হৃদয় সাদা বলে জাতীয় দলের হয়ে প্রায় নিয়মিতই খেলছেন; কিন্তু এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোটেই সাড়া ফেলতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হইচই ফেলে দেয়া বহুদূরে, দেশের হয়ে আহামরি পারফরমেন্সও নেই। লাল সবুজ জার্সি গায়ে তানজিদ তামিম ও তাওহিদ হৃদয়ের কেউ এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচ উইনিং ইনিংসও খেলতে পারেননি।
Advertisement
জাতীয় দলের পক্ষে ১৮ ওয়ানডেতে ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩০৭ রান তানজিদ তামিমের। সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৮৪। অন্যদিকে এ বাঁ-হাতি ওপেনার ১৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩ ফিফটিতে করেছেন ৩২৮ রান।
আর তাওহিদ হৃদয়ের অবস্থাও একই রকম। শুরুতে একটু নজর কাড়লেও ধীরে ধীরে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছেন হৃদয়। ওয়ানডেতে (৯৬*, ২২, ১১, ১১ও ৭) ও টি-টোয়েন্টি (৪, ১৪, ১২, ২ , ৬৩*) ফরম্যাটে শেষ ১০ ম্যাচে রান মোটে ২৪২।
৩৩ ওয়ানডেতে ২৯ ইনিংসে একটিও সেঞ্চুরি নেই তাওহিদ হৃদয়ের। হাফ সেঞ্চুরি ৭টি। সর্বোচ্চ স্কোর ৯৬*। মোট রান ৮৭৭। এই মিডল অর্ডারের ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও শতক নেই। তিন অর্ধশতকে মোট রান ৬৮৪।
অথচ তাদের পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে ভারতের জসস্বি জয়সওয়াল আর তিলক ভার্মারা এখন রীতিমত বড় তারকা বনে গেছেন। এর মধ্যে জয়সওয়াল এ মুহূর্তে ভারতের তরুণ প্রজন্মের নাম্বার ওয়ান ওপেনার। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভারতের ফ্রন্টলাইন ব্যাটার। আর তিলক ভার্মা এইতো সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়া বোলারদের লণ্ডভণ্ড করে উপহার দিলেন ২টি ঝোড়ো সেঞ্চুরি (৫৬ বলে ১০৭ ও ৪৭ বলে ১২০ রান)।
Advertisement
২০২৩ সালের জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোমিনিকায় টেস্ট অভিষেকেই শতক (৫০১ মিনিটে ৩৮৭ বলে) ও অর্ধশতক (১৪৮ মিনিটে ৭৪ বলে ৫৭) শিরোনামে উঠে আসেন জয়সওয়াল।
এখনো ওয়ানডে অভিষেক হয়নি এ ওপেনারের। তবে টেস্ট পরিসংখ্যান দূর্দান্ত; ১৪ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি, যার মধ্যে আবার একটি ডাবল, ৮টি অর্ধশতকসহ মোট রান ১৪০৭। গড় ৫৬.২৮।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও জয়সওয়াল ২৩ খেলায় ১ শতক ও ৫ অর্ধশতকে ৭২৩ রান করেছেন। গড় ৩৬.১৫। স্ট্রাইকরেট ১৬৪.৩১। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০ ম্যচে ১২টি সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি ১০টি। মোট রান ৩২৯১। গড় ৪৮.১৫।
অন্যদিকে তিলক ভার্মা ওয়ানডেতে (৪ ম্যাচে ১ ফিফটিসহ রান ৬৮) এখনো জ্বলে উঠতে না পারলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে (২০ খেলায় সমান ২টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৬১৬) এরই মধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৮ ম্যাচে ৫ শতক ও ৪ অর্ধশতকে ১২০৪ রান।
ওপরের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ৪ বছর ৯ মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে হৃদয় ও তানজিদ তামিমদের কাছে হারলেও জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করে জয়সওয়াল আর তিলক ভার্মারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এগিয়ে গেছেন অনেকটা পথ।
তারা এখন ভারতের রান মেশিনে পরিণত হয়েছেন। নৈপুণ্যে, রান করায় আর দলের সাফল্যে অবদান রাখায় সেদিনের বিজয়ী তানজিদ তামিম আর তাওহিদ হৃদয়রা পিছিয়ে পড়েছেন অনেকটা পথ। নিজেদের এখনো মেলে ধরায় ব্যস্ত হৃদয় ও তানজিদ তামিমরা।
এআরবি/আইএইচএস