এসেছে অগ্রহায়ণ। মাঠ জুড়ে এখন হলুদে-সবুজে একাকার। সোনালি ধানের ক্ষেতে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। আর কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ির উঠোন ভরে উঠবে নতুন ধানের ম ম গন্ধে।
Advertisement
পহেলা অগ্রহায়ণ মানেই বাঙালি বাড়িতে উৎসবের আমেজ। আবহমান এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পহেলা অগ্রহায়ণ দিনটি নবান্ন উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে এদেশের কৃষিতান্ত্রিক পরিবারগুলো।
কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরো ভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদিকাল থেকে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চালে হয় নবান্ন উৎসব। হিন্দু লোককথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বার্ষিক মাঙ্গলিক দিন। নতুন আমন চালের ভাত বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি।
আরও পড়ুন মানিকগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ১১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষনতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে কোথাও কোথাও দোয়া, মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। হিন্দু কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজন চলে ধুমধামে। হিন্দুদের বারোমাসের তেরো পার্বণের বড় পার্বণ হলো এই নবান্ন। এই নবান্নকে ঘিরে তাদের বারো পূজার প্রচলন আছে। তারা নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক প্রভৃতি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন নবান্ন গ্রহণ করেন। হিন্দু লোকবিশ্বাসে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলি’।
Advertisement
ফলন ও উৎপাদনে বোরোর চেয়ে আমন পিছিয়ে থাকলেও প্রতি বছর এর উৎপাদন বাড়ছে। লোক কবির ভাষায়- ‘আইলো অঘ্রান খুশিতে নাচে প্রাণ/ চাষি কাঁচিতে দিলো শান/ কাঁচি হাতে কচ কচা কচ কাটে চাষি পাকা ধান...।’ ঠিক এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে আগাম আমন ধান কাটার উৎসব। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ফসল কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে।
গ্রামের মতো শহরেও বিশেষ করে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিক নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়। জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদ প্রতি বছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে। আজ ১ অগ্রহায়ণ ঢাকায় প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় নবান্ন উৎসব আয়োজন করা হয়েছে।
কেএসআর/এএসএম
Advertisement