খেলাধুলা

বিদায়ের আগ মুহূর্তে আবেগঘন পোস্ট কায়েসের

প্রিয় টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে রেখেছেন দুই দিন আগেই। একই ঘোষণায় ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়েছেন ইমরুল কায়েস। আগামীকাল শনিবার খুলনা ডিভিশনের হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ চারদিনের ম্যাচ খেলবেন তিনি। বিদায়ী টেস্টের আগে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাঁহাতি এই ক্রিকেটার।

Advertisement

ভক্ত-সমর্থকদের সালাম জানিয়ে ইমরুল লেখেন, ‘আসসালামু’আলাইকুম, আমি ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে একটা বিষয় জানাতে চাই– কালকে ১৬ তারিখ আমি আমার ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট এবং টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি করতে যাচ্ছি। এটা আমার লাইফের গত ১৭ বছরের সবচেয়ে কঠিন এবং আবেগের মুহূর্ত।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি পরার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই দেখতেন কায়েস। প্রিয় ফরম্যাট ছিল টেস্ট জানিয়ে বাঁহাতি এই ব্যাটার বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট সবসময় আমার জন্য স্পেশাল ছিলো। আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকেই, নিজের দেশের হয়ে টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখতাম।’

ছোটবেলা থেকে বাবার অনুপ্রেরণা পেয়েই ক্রিকেটে আসছেন কায়েস। কিন্তু বাবা বর্তমানে বেঁচে না থাকায় কায়েসের কণ্ঠে শোনা যায় আক্ষেপের সুর। করেন স্মৃতিচারণও।

Advertisement

কায়েস লেখেন, ‘এই স্বপ্নটা দেখার জন্য যে মানুষটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা এবং সাহস যুগিয়েছিলেন, সেই মানুষটা আজ আমার পাশে নাই! আমার থেকে অনেক দূরে আজ! সে মানুষটা না থাকলে হয়তো আমার ক্রিকেটার, কিংবা আজকের ইমরুল কায়েস হয়ে ওঠা হতো না। সেই মানুষটা আমার লাইফের সবচেয়ে স্পেশাল মানুষ, আমার বাবা! আমার বাবা সবসময় বলতো, “যেদিন তুমি লর্ডস এ খেলবা, আর ব্যাট উঠাবা দর্শকদের দিকে, সেইদিন আমি হবো সবচেয়ে Happy মানুষ!”

‘মেহেরপুরে, আমার যখন মাত্র ৬-৭ বছর বয়স, তখন বাবা আমাকে একটা ক্রকেট ব্যাট বানিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি বল করতেন, আমি ব্যাট করতাম। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, ক্রিকেটটাকে আমার বাবার আদর্শ আর Honesty ‘র জালে ঘিরে রাখার। আমার টেস্ট ক্রিকেটের এই বিদায়বেলায় বাবা থাকলে হয়তো কিছুটা হলেও আমার আবেগ তার সাথে শেয়ার করতে পারতাম। আজ বাবা নেই কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণ করে “মেহেরপুরের ইমরুল” থেকে “বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস” হয়ে উঠতে যারা আমাকে ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, সেই “বাংলাদেশের মানুষ”, সেই “আপনারা” আজ আমার সাথে আছেন!’

নিজেকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কায়েস লেখেন, ‘আমি দেশের জন্য ক্রিকেট খেলাটাকে সবসময় সম্মান এবং ভালোবাসার মনে করেছি। আমি চেষ্টা করেছি, আমার সবটুকু দিয়ে। কখনো সফল হয়েছি, কখনো ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু সবসময় খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি, যেন আমার পক্ষ থেকে চেষ্টার কোন কমতি না হয়।’

কায়েস বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০১৯ সালে। গেল ৫ বছরে আর দলে জায়গা হয়নি। দেশের ক্রিকেটকে আরও কিছু দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। নিজে না পারলেও তরুণদের উপর ভরসা করে কায়েস লেখেন, ‘আমার দেশের হয়ে আরও অনেক কিছু দেবার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, আমি চাই আমার ইচ্ছার বাকিটুকু নতুন প্রজন্মের ছেলেরা করুক, ইনশাআল্লাহ। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ একদিন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে অনেক বেশি সম্মান বয়ে আনুক, বিশ্ব জয় করুক বাংলাদেশ!’

Advertisement

১৭ বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে কোনোভাবে জড়িতদের নিয়ে কায়েস লেখেন, ‘এই বিদায়বেলায় আমি কিছু মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং কিছু মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। প্রথমে আমার কোচ জামিলুর রহমান সাদ ভাইকে। এবং আরও ধন্যবাদ দিতে চাই – শামসুল ভাই, এহসান স্যার, হুমায়ুন চাচা, খালেদ মাহমুদ সুজন ভাই, কোচ বাবুল ভাই, কোচ সালাউদ্দিন স্যার, ফাহিম স্যার, বিসিসির সকল গ্রাউন্ড এর মাঠকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, আম্পায়ার্স, ম্যাচ রেফারি, সাপোর্টিং স্টাফ সহ আমার এই পথযাত্রায় অবদান রাখা প্রত্যেকটা মানুষকে!’

গণমাধ্যমকে নিয়ে কায়েসের বার্তা, ‘আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই– বাংলাদেশের সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া কে, যাদের মাধ্যমে আমার খেলার তথ্য, আমার কথা পৌঁছে গেছে আপনাদের কাছে।’

চ্যালেঞ্জিং নিজের পরিবারের সমর্থন নিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমার স্ত্রী– আমার ভালো, খারাপ সময়গুলোকে অনেক সহজ করে দিয়েছিলো। সেজন্য হয়তো অনেক কঠিন সময়ে আমি আবার ঘুরে দাঁড়াবার সাহস ও শক্তি পেয়েছিলাম। আমার মা, যে মানুষটার দোয়া এবং ভালোবাসায় আমি “আজকের ইমরুল কায়েস” হতে পেরেছি।’

টেস্ট থেকে অবসর নিলেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার ইচ্ছে আছে কায়েসের। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি শুধু টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আরও কয়েক বছর চালিয়ে যেতে চাই। বিশেষত বিপিএল ও ডিপিএল খেলতে চাই।

আমি আশা করি, বিসিবি আমার ইচ্ছাটাকে সম্মান দিবে এবং সম্মত হবে। যদি কখনো আবার সুযোগ হয়, আপনাদের এই ভালোবাসা নিয়েই আমি দেশের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ভিন্ন পেশা নিয়ে কাজ করতে চাই।’

সবশেষে বিদায় জানিয়ে কায়েস লেখেন, ‘১৬ তারিখ, মিরপুর স্টেডিয়ামে, খেলাশেষে কিছু মুহূর্ত কাটাতে চাই আপনাদের সাথে। যাদের ভালোবাসায় ভর করে এগিয়ে গেছে আমার পুরো জার্নিটা। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। ১৬ তারিখ, খেলাশেষে দেখা হবে। আর দেখা হবে ক্রিকেটের বিজয়ে! বাংলাদেশের বিজয়ে!’- ইমরুল।

এমএইচ/এএসএম