জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচাতো ভাই ও মহেশখালী উপজেলা যুবদল নেতা জিয়াউর রহমান জিয়াকে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগরীর জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এমন অভিযোগ করা হয়।
Advertisement
এসময় জিয়াউর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন পরিবারের সদস্য, স্বজন ও ছাত্র জনতা। তাদের দাবি-মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তারেক বিন উসমান শরীফের ইন্ধনেই জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের নিজ বসতভিটা থেকে উপজেলা যুবদলের সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়াউর রহমান জিয়াকে আটক করা হয়। পরে তার কাছ থেকে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে জানান কোস্ট গার্ড। কিন্তু পরিবারের দাবি জিয়াউর রহমান জিয়াকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এই ঘটনায় শুক্রবার মহানগরীর জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে করা হয়।
এসময় শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর ফুফু খায়রুন্নেছা রুবি বলেন, যুবদল নেতা জিয়াকে গ্রেফতারের পেছনে ইন্ধন দিয়েছে তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি উসমান গণি। তার সে সময়ের রাজনৈতিক সহযোগী, বন্ধু ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের অনেকে বর্তমানে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি এই মাফিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও জুলাই অভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের নিধনের ঘৃণ্য মিশনে নেমেছেন।
Advertisement
এসময় তানভীর সিদ্দিকীর চাচা কামরুল হাসান রুবেল বলেন, ৫-৬ আগস্ট পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে মহেশখালী থানায় হামলা কিংবা পুলিশের অস্ত্র লুটের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কক্সবাজার মডেল থানা, ঈদগাও থানা এবং চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানায় উত্তেজিত জনতা হামলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে জিয়া মহেশখালী অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় তার কাছে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের তথাকথিত দাবি কীভাবে যুক্তিসংগত হতে পারে?
শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর দাদা মো. শফি বলেন, গত মাসে তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারকে নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। যা সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জিয়া। তার তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি হয়। তখন সেখানে প্রশাসনের লোকজন; বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য, পুলিশ ও এবং স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। তখন কারও মনে হলো না জিয়া একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত! পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার জেলার ডিসিও তানভীর সিদ্দিকীর কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ও তার সঙ্গে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যও টের পাননি জিয়া ভয়ংকর ডাকাত!
তানভীর সিদ্দিকীর বাবা বাদশা মিয়া বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে আজ প্রায় সাড়ে তিনমাস হতে চললো। তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলার একজন আসামিকেও প্রশাসন গ্রেফতার করেনি। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, শহীদ তানভীর, আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ প্রায় দেড় হাজার শহীদের আত্মদান কি তবে ব্যর্থ হবে? আমরা এটা হতে দিতে পারি না। প্রয়োজনে দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবো। অবিলম্বে জুলাইয়ের হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর জিয়ার বিরুদ্ধে করা সব ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা-বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
তানভীর সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, তানভীর সিদ্দিকীর চাচা মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা রবিউল হাসান, আরকান শাহরিয়ার, মো. কাজল, শ্রমিক দল নেতা সরওয়ার আলম, চট্টগ্রাম যুব ক্যাবের সভাপতি মো. আবু হানিফ, ইসলামি ছাত্র শিবির নেতা নিয়াজ উদ্দিন দিনার, সৈয়দ সোহরাব সাহল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ জনগণ।
Advertisement
এমডিআইএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম